ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

একজন মানবিক এসপি
পঞ্চগড় প্রতিনিধি
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী।

দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী মানবিক এসপি হিসেবে প্রশংসায় ভাসছেন । তার নানামুখী জন ও পরিবেশ বান্ধব উদ্যোগের জন্য বেশ কয়েকবার তিনি শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন।

স্থানীয়রা এই পুলিশ কর্মকর্তা সম্পর্কে জানান, কয়েকযুগ থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের ফলে জেলার পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছিল। বিলীন হয়ে যাচ্ছিল দেশি মাছসহ জলজ প্রাণী। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল কৃষি জমি। স্থানীয় পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করেও বন্ধ করা যাচ্ছিল না পরিবেশ বিধ্বংসী এই কর্মকাণ্ড।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী যোগদানের এক মাসের মধ্যে শক্ত হাতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ করেন। বর্তমানে জেলার প্রাণ-প্রকৃতি পরিবেশ নতুন করে সজিব হয়ে উঠছে।

স্থানীয়রা আরও জানান, ২০১৯ সালের ৮ জুলাই পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদানের পর বদলে গেছে থানা পুলিশের চিত্র । পাল্টে গেছে সেবার ধরন। বদলে গেছে পুলিশের আচরণ। এখন পুলিশ সাধারণ মানুষের কথা মন দিয়ে শোনে। হয়রানি কমে গেছে। মামলা করতে পয়সা লাগে না। থানার প্রধান ফটকগুলোতে ইতিপূর্বে জিডি, অভিযোগ, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, পাসপোর্ট ভিআর, চাকরির ভিআরসহ যেকোনো পুলিশি সেবা গ্রহণ করতে টাকা লাগে না-এমন লেখা ব্যানার, ফেস্টুন ঝুলিয়ে দেন। ফলে থানায় দালাল ও ঘুষের দৌরাত্ম্য নেই।

স্থানীয়রা বলেন, এই এসপি যোগদানের পর থেকে কোনো টাকা-পয়সা লেনদেন ছাড়াই মানুষ নিরন্তর সেবা পাচ্ছেন। এলাকায় মাদক নিয়ন্ত্রণ, সন্ত্রাস নির্মূলসহ নানা কাজে পুলিশ ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে।

পুলিশের সেবা নিতে আসা অনেকে তার এমন কাজের ভূয়সী প্রশংসা করছেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব কাজের কথা তুলে ধরছেন। তিনি প্রতিদিন ডিউটিরত অফিসার ও প্রহরীর কাছে খোঁজ নেন কোনো মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে কি না। ফলে থানায় কর্মরত সব পুলিশের মধ্যে সাধারণ মানুষের প্রতি ভাল ব্যবহার করার মানসিকতা সৃষ্টি হয়েছে। অফিস থেকে সিসি ক্যামেরায় থানাগুলোর কার্যক্রম তদারক করছেন। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছেন। সিসি ক্যামেরার কল্যাণে বেশকিছু অপরাধী ধরা পড়েছে।

পুলিশের পোস্টিং নিতে পরিদর্শকদের বিভিন্ন মানদণ্ড বিচার করে নম্বর প্রদান করা হয়। এই নম্বরের ভিত্তিতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। কেউ চাইলে পছন্দের জায়গায় যেতে পারছেন না।

তিনি করোনায় অসহায় মানুুষের বাড়িতে বাড়িতে রাতের আঁধারে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। রেলস্টেশন ও মাঠের মধ্যে পড়ে থাকা মানুষকে তুলে এনে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আটোয়ারীতে বাজারে পড়ে থাকা এক অসহায় বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। করোনায় পরিবহন বন্ধ হয়ে গেলে পঞ্চগড়ের চাষিরা সবজি নিয়ে বিপাকে পড়েন। তিনি অন্য জেলার ব্যবসায়ীদের পঞ্চগড়ে এনে বিশেষ ব্যবস্থায় দেশের অন্য জেলায় সবজি পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

একাধিক হত্যা মামলার আসামিদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করেছেন। অসুস্থ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীকেও আর্থিক সহায়তা করেছেন। রমজানে ও করোনায় গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য বাড়িতে বাড়িতে উপহার পাঠিয়েছেন। তিনি গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।

জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যথার্থ দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখায় শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। গত সোমবার ভার্চুয়ালি রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি অফিসের সম্মেলন কক্ষে এক সভার মাধ্যমে রংপুর বিভাগের আট জেলার শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ নিয়ে তিনি বেশ কয়েকবার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করলেন।

সদর উপজেলার ভূসিভিটা গ্রামের ভ্যান চালক এনামূল হক জানান, গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে আমাকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে একটি চক্র। তারা ৫০ হাজার টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানায়। তিনি ১০ হাজার টাকা দিতে রাজি হলে তাকে বাড়িতে ফোন করে টাকা আনার সুযোগ দেয় অপহরণকারী চক্রটি। বিষয়টি আমার পরিবারের লোকেরা পঞ্চগড় সদর থানায় জানালে গত ১৯ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে অমরখানা বোর্ড বাজার এলাকা থেকে মুক্তিপণের টাকাসহ পুলিশ চক্রটির সদস্য মা-মেয়েকে গ্রেফতার করে এবং তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পঞ্চগড় থানার পুলিশ খুব ভালো কাজ করেছে। এলাকার মানুষ খুবই খুশি। 

বাংলাবান্ধা স্থল বন্দরের ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, পুলিশ সুপার শুধু আমাদের কাজের খবর নেন না । তিনি আমাদের পরিবারের খবর নেন। আমাদের নানাভাবে সহযোগিতা করেন।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, আইজি ও ডিআইজি স্যারের নির্দেশনায় পঞ্চগড়ের পুলিশকে জনবান্ধব, হয়রানিমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি। মানুষের প্রথম ভরসার স্থল হবে থানা। পুলিশের সেবা নিন। সেবা দিতে কেউ হয়রানি, দুর্নীতি বা অনিয়ম করলে জিরো টলারেন্স। অভিযোগ পেলে আইনগত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডিআইজি অফিস থেকে মূল্যায়ন করে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর