ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পর্যটক আকর্ষণে পর্যটক বাস
দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মৌলভীবাজার। এ জেলার এক দিকে রয়েছে ধু ধু প্রান্তর জুড়ে নয়ানাভিরাম চা বাগান আর আঁকা বাাঁকা পাহাড় টিলায় সবুজ বৃক্ষরাজী। যতদূর চোখ যায় সবুজে ঘেড়া উচু নিচু টিলা, উপরে নীল আকাশ। এদিক ওদিক তাকালেই চোখে পরে সবুজ বনানী আর বর্ণিল পাক-পাখালি। অন্যদিকে পাহাড়ের চূড়া থেকে জলপ্রবাত-ঝর্ণাধারা, নদ-নদী, খাল-বিল আর দিগন্ত বিস্তৃত হাইল হাওরের নীল জলরাশী। চা বাগান ,লেক, পাহাড়, খনিজ গ্যাসকূপ, লেবু, আনারস, পান আর আগর বাগান দিয়ে অদ্ভুদ সাজানো এখানকার  প্রকৃতি।

এছাড়া জেলায় নয়টি উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ক্ষুদ্র-নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর  বৈচিতত্র্যেপূর্ণ জীবন যাপন। তাদের রয়েছে আলাদা সংস্কৃতি, উৎসব। যুগ যুগ ধরেই প্রকৃতির এই অপরূপ সৗেন্দর্য মুগ্ধ করে তুলছে এখানে আসা পর্যটকদের। জেলার এই পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে জেলা প্রসাশন থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। পর্যটন শিল্পে বিকাশ, সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো চিহ্নিত করে প্রণয়ন করা হয়েছিল একটি কর্ম কৌশল।

এই কর্ম কৌশলের মধ্য ছিল ‘প্যাকেজ ভ্রমণ’। পর্যটকরা জেলার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণের জন্য আজ বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পর্যটন বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করা হয়। এটি উদ্বোধন করেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, সহকারী কমিশনার নুসরাত লায়লা নীরা প্রমুখ। 

জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে জানা যায়, ৪০ সিটের দুটি বাস দিয়ে দুই প্যাকেজে এই সার্ভিস চালু হচ্ছে। আগামী শনিবার থেকে এই বাসের আনুষ্টানিক যাত্রা শুরু হবে। সার্বিক তত্ববধানে থাকবে জেলা প্রশাসন।  প্রথম প্যাকেজের পর্যটন বাস প্রতিদিন সকাল ৯টায় পর্যটক নিয়ে শ্রীমঙ্গল থেকে ছেড়ে বড়লেখা যাবে। পথে চা বাগান, গগণটিলা, মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, হাকালুকি হাওর ঘরে দেখাবে। প্রথম প্যাকেজে জনপ্রতি ভাড়া ৩০০ টাকা। আর দুপুরের খাবারসহ ৪০০ টাকা।

আর দ্বিতীয় প্যাকেজের একই সময়ে পর্যটন বাসটি বড়লেখা থেকে ছেড়ে শ্রীমঙ্গলে আসবে। পথে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধরপুর লেক, বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন (সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা) ও বাইক্কা বিল নিয়ে যাবে। আর দ্বিতীয় প্যাকেজে জনপ্রতি ভাড়া ৩৫০ টাকা। দুপুরের খাবারসহ ৪৫০ টাকা। এসব স্থানে প্রবেশে পর্যটদের কোন প্রবেশমূল্য দিতে হবে না। 

পর্যটকরা বড়লেখা, শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজার  কাউন্টার থেকে বাস ছাড়ার আগে টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। তবে বড়লেখা, শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজার কাউন্টার ছাড়াও পর্যটকরা বাসে উঠতে পারবেন জুড়ি চৌমুহনী, কুলাউড়া পৌরসভার ও রাজনগর কলেজের সামনে  থেকে।  

শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সহ-সভাপতি মো. খালেদ হোসেন বলেন, এটি খুবই ভাল একটি উদ্যােগ। পর্যটন বাস চালু করায় পর্যটকরা সহজেই কয়েকজন একসাথে মিলে  বিভিন্ন দর্শনীয় কেন্দ্রে যেতে পারবেন। 

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (পর্যটন) নুসরাত লায়লা নীরা বলেন, পর্যটনের বিকাশে জেলা প্রশাসক থেকে যে কর্মকৌশল নেয়া হয়েছিল সেই কর্মকৌশল আমরা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করছি। এই বাস সার্ভিস চালু করায় পর্যটকরা নিরাপদে সাচ্ছন্দ্য কম ভাড়ায় দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখতে পাবেন। এছাড়া আরো দুটি বড় কর্মপরিকল্পনা বাস্তাবায়ন করা হবে।। 

জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, প্রতিদিন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পর্যটকরা এ জেলায় আসছেন। কিন্তু যাতায়াতের সঠিক ধারণা না থাকায় পর্যটকরা ২-৪টি দর্শনীয় স্থান দেখেই ফিরে যান। আবার মাঝে মধ্যে পরিবহন বিড়ম্বনায় পড়েন। তাই কম সময় ও কম খরচে পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখার জন্য পর্যটন বাস চালু করা হয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/আল আমীন



এই পাতার আরো খবর