ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

গারো পাহাড়ে বন্য হাতির তাণ্ডব
শেরপুর প্রতিনিধি
গারো পাহাড়ে বন্য হাতির তাণ্ডব।

শেরপুর জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতি ও নালিতাবাড়ী উপজেলা এখন পাকা আমন ধান ও শীতের সবজিতে ভরপুর। এসব উপজেলার গারো পাহাড়ে অন্তত ৪০টি গ্রাম। কয়েক দিন ধরে এসব গ্রামে ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা শতাধিক বন্যহাতি প্রতিদিনই চালাচ্ছে তাণ্ডব।

রাত হলেই কৃষকের ধান ও সবজি সাবার করে দিচ্ছে। হামলা চালাচ্ছে বাড়ি-ঘরে। বন্যহাতিগুলো সারাদিন থাকে পাহাড়ের গহীন জঙ্গলে। সন্ধ্যা হলেই নেমে আসে লোকালয়ে, আর সারা রাত চলে তাদের তাণ্ডব। বাধা দিতে গেলে শুরু হয় হাতি-মানুষের যুদ্ধ।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, ফসল বাঁচাতে সারারাত জেগে পাহাড়ি ও বাঙালি কৃষকরা পাহাড়া বসিয়েছে। আক্রমণের সময় ঢাকঢোল পিটিয়ে, পটকা ফুটিয়ে আর মশাল জ্বালিয়ে ঠেকানো যাচ্ছে না হাতির তাণ্ডব। মানুষজন হাতির আতঙ্কে দিনরাত পার করছে।

স্থানীয় আদিবাসী নেতা ব্রতীন মারাক ও প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, কৃষি নির্ভর পাহাড়ের মানুষের ভরসা এই ফসল। ফসল পাকলেই হাতির দল খেয়ে সাবার করছে। মাঝে মধ্যে বাড়ি ঘরেও হামলা করছে। এই পাহাড়ে ১৯৯৫ সাল থেকে বন্যহাতির আক্রমণে অন্তত ৭০ জন মানুষ মারা গেছেন। আহত হয়েছেন শতশত মানুষ। ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকার জমির ফসল। হাতির তাণ্ডব থেকে মানুষ ও ফসল রক্ষা করতে সরকার ও এনজিও বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছিল। কিন্ত কিছুই কাজে আসে নাই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বন কর্মকর্তা বলেছেন, হাতির প্রকৃতি হলো তাদের পূর্ব-পুরুষ যে পথ দিয়ে চলাচলা করে থাকে, পরের প্রজন্মও সেই পথে চলাচল করে। ওই পথ বাধাগ্রস্ত হলেই হাতির দল আক্রমণ ও নানা ক্ষতি করে। বনে মানব বসতি যত বাড়বে, হাতির আক্রমণ ততই বাড়বে, এটাই প্রকৃতি। এখানে নির্বিচারে বন দখল করে মানব বসতি গড়ে উঠছে, যা প্রকৃতি বিরুদ্ধ। পাহাড়ে হাতির চলাচলের জায়গায় বাড়িঘর ও ফসল ফলানো হচ্ছে। ফলে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব বাড়ছেই। তাছাড়া পাহাড়ে হাতির খাবার সংকট হওয়ার জন্যও ফসল ও মানুষের বাড়িঘরে হাতির আক্রমণ বাড়ছে।

জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়বাসীকে সরকারি সহযোগিতা ইতিমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। আরও যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তাদের জন্যও ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা বরাদ্দ করা হয়েছে। যেকোনো দুর্যোগে জেলা প্রশাসন ওদের পাশে থাকেবে। স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে আপাতত হাতি তাড়ানোর কৌশল হিসেবে সোলার ফেনসিং প্রকল্পটি আবারও চালু করছে বন বিভাগ।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর