ঢাকা, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

নিজ শিশুকন্যাকে যৌন নির্যাতনের মামলায় সাবেক সাংসদপুত্র গ্রেফতার
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
সংবাদ সম্মেলন।

নিজ শিশুকন্যাকে যৌন নির্যাতনের মামলায় ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও চিকিৎসক ইব্রাহিম রহমান রুমি বাবুকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকা জজ আদালত-৩ এর বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।

এর আগে, নিজের শিশু সন্তানকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে ইব্রাহিম রহমান রুমির বিরুদ্ধে গত রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন রুমির স্ত্রী আফিয়া বিনতে শাহে, শাশুড়ি মাগফুরা আহমেদ ও তার শিশু কন্যা। সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে অসহায় দাবি করে নাতনির প্রতি ন্যক্কারজনক অন্যায়ের বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শিশুর নানি মাগফুরা আহমেদ।

ইব্রাহিম রহমান রুমি ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সাংসদ ও বিএনপি উপদেষ্টা মসিউর রহমানের বড় ছেলে। বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন ধরে জেলাজুড়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।

লিখিত বক্তব্যে মাগফুরা আহমেদ জানান, ২০১৬ সালের ২৬ জুন পারিবারিকভাবে ঝিনাইদহের সাবেক এমপি মসিউর রহমানের ছেলে ইব্রাহিম রহমান রুমি বাবুর সাথে আমার মেয়ে আফিয়া বিনতে শাহের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। বিয়ের দুই মাস পর সামান্য কারণে আমার মেয়েকে বেধড়ক মারধর করে। এরপর বিভিন্ন সময়ে যৌতুক চেয়ে নির্যাতন করতো। সন্তান গর্ভে থাকাকালেও আমার মেয়েকে মারধর করা হয়। সংসার জীবনে বনিবনা না হওয়ায় গত বছরের ২৬ আগস্ট তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।

তিনি বলেন, অব্যাহত নির্যাতনের কারণে আমি ২০১৭ সালে মেয়েকে ইতালি নিয়ে যাই। তখন আমার মেয়ে গর্ভবতী ছিল। এরপর মেয়েকে বুঝিয়ে দেশে আনার ১৫ দিন পর আবারও তার ওপর নির্যাতন শুরু করে স্বামী। সন্তান জন্মের পরও নানা অজুহাতে দিন দিন নির্যাতন বাড়তে থাকে। সেসময় ঝিনাইদহ থানা পুলিশ আমাদের সহযোগিতা করে।

গত বছরের ২৩ মার্চ বিকাল আনুমানিক সাড়ে চারটায় আমার মেয়ের অনুপস্থিতিতে চার বছরের শিশুকন্যাকে উত্তরার বাসা থেকে নিয়ে যান রুমি। গত ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রুমি তার কন্যাকে কলাবাগানের বাসায় নিজের হেফাজতে রাখেন। ওই সময় ফেরত চাইলেও কন্যাকে নিতে দেননি রুমি। পরে ২২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের আদেশে কন্যা শিশুকে হেফাজতে নেয় তার মা। ২০২১ সালের ১২ অক্টোবর রাত আনুমানিক ৮টায় আবারও শিশু সন্তানটিকে নিজের কলাবাগানের বাসায় আনেন ইব্রাহিম রহমান রুমি। পরদিন ১৩ অক্টোবর দুপুর ১২টার দিকে শিশুর মা কলাবাগান থেকে চার বছরের শিশুটিকে উত্তরায় নিজের বাসায় ফিরিয়ে আনেন। বাসায় আনার পর পরিহিত পোশাক পরিবর্তনকালে মেয়ের শরীরে নির্যাতনের ছাপ দেখতে পান তিনি।

অভিযোগ করে শিশুটির নানি আরও জানান, গত ২৩ মার্চ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর এবং ১২ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর দুপুর ১২টা পর্যন্ত রুমির বাসায় অবস্থানকালে বিভিন্ন সময়ে শিশুর ওপর নিপীড়ন চালানো হয়। এরপর গত ২৭ নভেম্বর বিকালে নিপীড়নের শিকার শিশু সন্তানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান তার মা। চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর শিশুটিকে ওসিসিতে (ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার) ভর্তির জন্য রেফার করেন। ২৭, ২৮ ও ২৯ নভেম্বর নির্যাতনের শিকার শিশুটির যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। পরে আমার মেয়ে কলাবাগান থানায় একটি মামলা করে। মামলার পর ইব্রাহিম রহমান রুমির প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাকে এখনো পর্যন্ত গ্রেফতার করেনি। আমি ধর্ষক ও মাদকাসক্ত ইব্রাহিম রহমান রুমির বিচার চাই।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইব্রাহিম রহমান রুমি (বাবু) জানান, আমার সম্মান ক্ষুণ্ন করার জন্য একটি মহলের ইন্ধনে তারা একটি মিথ্যা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এসব করে আমাকে কিছুই করতে পারবে না। কারণ আমিও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর