ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তুপে বই-খাতা খুঁজছে শিশু মরিয়ম
নাটোর প্রতিনিধি
পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তুপে বই-খাতা খুঁজছে শিশু মরিয়ম।

রাতে পড়াশোনা করে বইগুলো গুছিয়ে রেখেছিল মরিয়ম খাতুন। সকালে উঠে সেই বইগুলোতে চোখ বোলানোর কথা ছিল। কিন্তু রাতে আগুন আগুন চিৎকারে ঘুম ভাঙে তার। দ্রুত মায়ের হাত ধরে ছোট বোনকে সাথে নিয়ে বাসা থেকে বের হতে হয়। চোখের সামনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় সবকিছু।

বুধবার দিবাগত রাত ২টায় নাটোর সদর উপজেলার হুগোলবাড়িয়া রেলগেট এলাকায় তিনটি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেখানে মরিয়ম খাতুনদের ঘরও ছিল।

আগুন নিভে গেলে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় মরিয়ম খাতুন পোড়া স্তুপে বই খুঁজছিল। তার মা শাহানাজ বেগম তাকে সাহায্য করছিলেন। মরিয়ম শহরের তেবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।

মরিয়ম জানায়, আগের দিন এশার পর অনেকক্ষণ পড়াশোনা করেছে। ঘুমানোর আগে বইগুলোও গুছিয়ে রেখেছিল। আজকে সকালে প্রাইভেটে যাওয়ার আগে রাতের পড়া চোখ বোলানোর কথা থাকলেও আগুন সেটি হতে দিল না।

শাহানাজ বেগম জানান, তারা ৯ বছর ধরে এখানে থাকছেন। তার স্বামী আন্তঃজেলা ট্রাকে হেলপার হিসেবে কাজ করে। দুইদিন আগে সে ট্রাক নিয়ে সিলেট গেছে। অন্যের জমিতে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে টিনের চালা ও টিনের বেড়া দিয়ে তিনটি কক্ষ তুলেছিলেন। থাকতেন দুই মেয়ে মরিয়ম (১৩) ,পলি (৪) ও শাশুড়ি রাবেয়া বেওয়া (৭০)। বাসা পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় এখন খোলা আকাশের নিচেই থাকতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।

পাশের ঘরে থাকতেন বৃদ্ধ শাশুড়ি রাবেয়া বেওয়া। ৯ বছর ধরে এই ছোট ছেলের সাথেই থেকে আসছিলেন। তাদের তিনটি কক্ষ একেবারে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ঘরে থাকা পুরো মাসের জন্য কেনা ১ মণ চাল, ১০ কেজি আটাও পুড়ে গেছে। রাত থেকে আগুনের সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনো না খেয়ে আছেন। কারণ, ঘরের সঙ্গে জমানো টাকাপয়সাও পুড়ে গেছে।

মোস্তফার বোন লাইলী বেগম বলেন, পানি খাওয়ার জন্য পানির পাত্রটাও নেই। এক পোশাকে বেরিয়ে এসেছে। খোলা আকাশের নিচে আছে কোথায় যাবে, কোথায় ঘুমাবে আল্লাহই জানে।

কীভাবে আগুন লাগল প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে কারও শত্রুতা নেই। আমার ভাই দিনমজুরি করে দিন এনে দিন খায়। কেউ আগুন লাগাই দিলে আল্লাহ বিচার করুক।

ফায়ার সার্ভিস নাটোরের সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুনে পরিবারটি ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র সবই ভস্মীভূত হয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর