ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিকক্ষে চলছে ক্লাস, দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা
দিনাজপুর প্রতিনিধি
জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিকক্ষে চলছে ক্লাস।

শ্রেণিকক্ষ সংকট, শিক্ষার্থীদের তেমন সুবিধা নেই, এর উপরে বর্ষাকালে টিনের ফাঁক দিয়ে ক্লাস চলাকালীন পানি পড়ে বইপত্র নষ্ট হয়ে যায়। আবার টিনশেডের শ্রেণিকক্ষের মাটির দেয়াল জরাজীর্ণ হওয়ায় ঝুঁকিতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। এতে অভিভাবকরাও আশঙ্কায় থাকেন তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য। এ অবস্থা দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার অমরপুর ইউপির বাসুদেবপুর হাই উল উলুম দাখিল মাদ্রাসায়।

বর্ষায় ঘর ভাঙার আশঙ্কার পরেও এই গরমে বিদ্যুতহীন শ্রেণিকক্ষে ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা। সামান্য ঝড়-বৃষ্টিতে নড়াচড়া করতে থাকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ চারটি শ্রেণিকক্ষ। এভাবেই চলছে এই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া। এই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করলেও আজও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।

জানা যায়, চিরিরবন্দরের অমরপুর ইউপির বাসুদেবপুর হাইউল উলুম দাখিল মাদ্রাসাটি ১৯৯৮ সালে স্থাপিত হয়। বর্তমানে শিক্ষার্থী প্রায় ৩০০ জন। তিনটি মাটির ঘর নিয়ে যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লে আরও তিনটি টিনশেডের শ্রেণিকক্ষ তৈরি করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানে টানা দশ বছর ধরে পরীক্ষায় শতভাগ পাস। পরে মাদ্রাসার উত্তর দিকে তিনটি পাকা শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করে সেখানেও চলছে পাঠদান।

এরই মধ্যে ২০১৯ সালে মাদ্রাসাটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে এমপিওভুক্ত করা হয়। পরে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়। কিন্তু শ্রেণিকক্ষ সংকট বেড়ে যায়। এতে ঝুঁকিপূর্ণ মাটির ঘরে ক্লাস করতে হয় শিক্ষার্থীদের। অথচ জরাজীর্ণ মাটির ঘর আর ফুটো টিনশেডের ঘরগুলো এখন ক্লাস অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঝড়-বৃষ্টির সময় শ্রেণিকক্ষে থাকা শিক্ষার্থীদের বইখাতা ভিজে যায়। কখনো শিক্ষার্থীরাও ভিজে যায়।

কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, পাঁচ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে কষ্ট করে পড়াশোনা করছি। মাটির ঘরে ক্লাস করতে হয় ভয়ে। সামান্য ঝড়-বৃষ্টিতে মাটির ঘরের জরাজীর্ণ টিনশেড দিয়ে পানি পড়ে। দেয়ালে ফাটল ধরেছে। একটি শ্রেণিকক্ষও ক্লাস উপযোগী নয়। বৃষ্টির সময় খুব কষ্ট হয়। এভাবে চললে মাদ্রাসাটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমবে এবং পড়ালেখার মানও কমে যাবে।

মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক গোলাম রাব্বানী বলেন, মাটির টিনশেড ঘর কখন যে ভেঙে পড়ে বলা মুশকিল। শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষের সংকট দীর্ঘদিনের। এখন জরাজীর্ণ অবস্থায় মাদ্রাসাটিতে শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর ভালো ফলাফল করছে। কিন্তু মাদ্রাসায় একটা বড় ভবনের অভাবে শিক্ষার্থীদের ভীতিমুক্ত সুন্দর পরিবেশে পাঠদান করানো সম্ভব হয়ে উঠছে না।

বাসুদেবপুর হাই উল উলুম দাখিল মাদ্রাসার সুপার রফিকুল্লাহ সরকার জানান, ১৯৯৮ সালে তিনটি মাটির শ্রেণিকক্ষ নিয়ে মাদ্রাসাটির যাত্রা শুরু হলেও ২০০১ সালে পাঠদানে অনুমতি মেলে। পরে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মানোন্নয়ন হওয়ায় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আরও তিনটি পাকা শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করা হয়। শ্রেণিকক্ষের সংকট ও জরাজীর্ণ অবস্থায় ২০১৬ সালে ভবন নির্মাণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য বরাবর আবেদন করা হয়। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত হয়। এ প্রতিষ্ঠানে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত আছে। মোট ১১টি ক্লাশ রুম রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩টি পাকা রুমে ক্লাস হয়। বাকি ৮টি ক্লাস রুমই জরাজীর্ণ এবং এর ৩টি রুম একেবারে ঝুঁকিপূর্ণ।

তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে কয়েকবার স্থানীয় সংসদ সদস্যর কাছে ভবন নির্মাণের জন্য আবেদন করলেও এখনো বরাদ্দ মেলেনি। বর্তমানে নতুন ভবন না থাকাসহ শ্রেণিকক্ষ সংকটে শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কষ্ট করে পড়ালেখা করছে।

মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও অমরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হেলাল সরকার বলেন, নতুন ভবনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। ভবন নির্মাণের জন্য চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর