ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

জ্বরে মৃত্যু হওয়া বাবার দাফন হলো রান্নাঘরে
নেত্রকোনা প্রতিনিধি

নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরের পানি কিছুটা কমলেও অন্যান্য উপজেলায় বেড়েই চলেছে। কোমরপানিতে ঘরবন্দি মানুষ। বাড়ি থেকে মূল সড়কে যেতে লাগে নৌকা। এমন অবস্থায় মরদেহ দাফন করতে হয়েছে রান্নাঘরে।

সরেজমিন দেখা গেছে, পুরো এক সপ্তাহে জেলার ১০ উপজেলার ৫ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রথম বন্যাকবলিত কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর এলাকায় সেনাবাহিনীসহ প্রশাসন এবং নানা সংগঠনের উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চালু থাকলেও উব্ধাখালি ও কংশ নদীর পানির ঢল এখন অন্যান্য এলাকায় ধাবিত হচ্ছে।

জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার (২২ জুন) আটপাড়া উপজেলার স্বরমুশিয়া ইউনিয়নের মাদল গ্রামের আলী উসমানের ছেলে সলিমুদ্দিন (৬৫) মারা যান। এলাকার কবরস্থানসহ গ্রামীণ সড়কেও পানি থাকায় রান্নাঘরেই তাকে সমাহিত করেন স্বজনরা।

এলাকাবাসী ও সলিমুদ্দিনের ছেলে বলেন, ‘বাবা বেশকিছু দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। মঙ্গলবার সকালে শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু কোমর পরিমাণ পানির কারণে হাসপাতালেও নেওয়া যায়নি। পরে দুপুরের দিকে বাবা মারা যান।’

‘কোমরপানির মধ্যে কবরস্থানেও দাফন করার কোনো উপায় নেই। শেষমেশ কোনো উপায় না পেয়ে কোনোরকম জানাজা দিয়ে রান্নাঘরের ভেতরই কবর দিতে হয়েছে।’

একই উপজেলার মাইঝপাড়া গ্রামের বকুলা আক্তার বারান্দায় চুলা বসিয়ে দুদিন পর হাঁড়িতে চাল দিয়েছেন। স্বামী সেকান্দর সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০ দিন আগে মারা যান। বাড়িতে ৪০ দিনের আয়োজন তো দূরের কথা, কোনো আলেমকেও খাওয়াতে পারছেন না। সে কারণে বারান্দায় চুলা পেতে মাদরাসার দুই এতিম ছাত্রকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন।

এদিকে যাদবপুর, সিংরাজনা, বিছরাকান্দা, মাদল এলাকার শত শত বাড়িতে হাঁটুসহ কোমর পরিমাণ পানি জমলেও নেই কোনো সহযোগিতা। অনেকের নেই ডুবে যাওয়া সড়ক পেরিয়ে খাবার আনার উপায়। বেশকিছু মানুষ চলে যাচ্ছেন ট্রলারে চড়ে অন্যত্র। আবার কিছু পরিবার আটপাড়া নেত্রকোনা মেইন সড়কের পাশে খালি জায়গায় গবাদি পশুসহ আশ্রয় নিয়েছেন। 

ঘরবন্দি অসংখ্য মানুষ। বাড়িঘর থেকে বের হতে পারছেন না নারী ও শিশুরা। একমাত্র ভরসা তাদের নৌকা। এক বাড়ির ডিঙি নৌকা এখন কয়েক বাড়ির ভরসা। 

ছোট ছোট শিশু থেকে শুরু করে সবাইকে একস্থান থেকে অন্য স্থানে নৌকায় চলতে হচ্ছে। চুলাগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আটপাড়া উপজেলার যাদবপুরের অর্ধশত পরিবারে রান্না বন্ধ রয়েছে। 

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

 



এই পাতার আরো খবর