ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

দুম্বার খামার গড়ে উঠেছে বগুড়ায়
আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া
দুম্বার খামার গড়ে উঠেছে বগুড়ায়

আরবের মরুভূমির প্রাণী দুম্বার খামার গড়ে উঠেছে বগুড়ায়। ১০টি দুম্বা দিয়ে শুরু করে তিন বছরে এখন খামারে আছে ২১টি দুম্বা। দুম্বার খামার গড়ে এখন বাণিজ্যিকভাবে স্বপ্ন দেখছে টিএমএসএস বহুমুখী কৃষি খামার।

জানা যায়, পিকেএসএফ এর সহযোগিতায় প্রোজেক্ট লিফটের মাধ্যমে বগুড়ার টিএমএসএস বাণিজ্যিকভাবে এই দুম্বার খামার গড়েছে। খামারের নাম দেওয়া হয়েছে টিএমএসএস বহুমুখী কৃষি খামার। বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার সাজাপুর পদ্মপুকুর এলাকায় খামারের অব্স্থান।

২০১৯ সালে এ খামারে ১০টি দুম্বা নিয়ে শুরু করলেও সময়ের পরিক্রমায় এখন হয়েছে ২১টি দুম্বা। দুই জাত মিলিয়ে খামারে ছোট-বড় মোট ২১টি দুম্বা রয়েছে। খামারে পারশিয়ান জাতের ১টি ও আওয়াশী জাতের ২০টি দুম্বা পালন করা হচ্ছে। আরবের অন্য দেশসহ মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার শুষ্ক পাথুরে এলাকায় ছাগল জাতীয় প্রাণী দুম্বা। দেখতে অনেকটা দেশীয় ভেড়ার মতো। তবে দুম্বা ভেড়ার তুলনায় লম্বা ও উচ্চতায় বড় এবং মাংস বেশি হয়ে থাকে।

মাংস উৎপাদনে ছাগল ও ভেড়ার চেয়ে বেশি কার্যকরী দুম্বা। ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় একটি দেশীয় ভেড়া পাওয়া গেলেও মরুভূমির একটি দুম্বার দেশীয় টাকায় প্রায় এক লাখ টাকা। দেশে বছরের ৮ মাস গরম থাকায় দুম্বার খামার গড়ে উঠেছে। খামারটি এখন বাণিজিকভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। দুম্বার তিন মাসের একটি বাচ্চার ওজন হয় ৩৫ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১ লাখ টাকা। একটি দুম্বার গোশত হয়ে থাকে দেড়শ’ থেকে দু’শ কেজি। এছাড়াও এটি পালনে খরচ খুবই কম। দুম্বা দৈনিক ৪০ থেকে ৪৫ টাকার খাবারই যথেষ্ট। সময়মতো ভ্যাকসিন দিলে ঠিকমতো বেড়ে ওঠে।

টিএমএসএস বহুমুখী কৃষি খামারের লিফ্ট প্রোজেক্টের লাইভস্টক অফিসার ডা. রেহেনা পারভিন জানান, এ খামারে দুম্বা প্রোজেক্টের উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের ফিল্ড লেভেলে কিছু উপকারভোগী সদস্য রয়েছে। দুম্বার বংশ বিস্তার করে এক জোড়া করে মেল-ফিমেল দুম্বা উপকারভোগী সদস্যদের মাঝে বিতরণ করা হবে। এছাড়াও যে সকল দুম্বার বয়স হয়ে গেছে সেগুলো বাণিজ্যকভাবে কোরবানির ঈদে বিক্রি করা হবে। দুম্বা পালনে খরচ খুব কম। দুম্বাকে দিনে চার বার খাবার দিলেও দুই বেলা ভারী দানাদার খাবার দিতে হয়। দুই বেলা কাঁচা ঘাস দিতে হয়। দানাদার খাবার ৪৫০ গ্রাম করে খায় একেকটি দুম্বা। দানাদার খাবার যেমন গমের ভূসি, ভুট্টা ভাঙা, সয়াবিন, খৈল, জিসিপি লবণ ইত্যাদি দুম্বার প্রিয় খাবার।

তিনি বলেন, দুম্বার খামারে দেশীয় জাতের কোরবানি যোগ্য ষাঁড় রয়েছে ২১টি, পেকিং জাতের হাঁস রয়েছে ৩৭২টি, যা প্রতিদিন গড়ে ডিম দেয় ১৮০-১৮৮টি, পাশাপাশি কালার বল মুরগি রয়েছে ১০৫টি। এ মুরগির স্বাদ দেশী মুরগির মতই। পাশাপাশি খামারের পাশে রয়েছে পুকুর। যেখানে দেশীয় জাতের মাছ চাষ করা হয়।

খামারের পরামর্শক মহাতাব উদ্দিন বলেন, আমাদের দেশে প্রতি বছর গরু, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা এগুলো কোরবানি করে থাকে। তবে কোরবানির সময় ব্যাপক চাহিদা বাড়ে। অনেক বিত্তবান ব্যক্তি শখের বসে গরু কোরবানি না করে দুম্বা কোরবানি করে থাকেন। এছাড়া দুম্বার সহজলভ্যতা হলে দুম্বার দামও কমে আসবে। তখন সারা বছর মাংস পাওয়া যাবে। সে দিক থেকে খামার গড়ে খামারিরাও লাভবান হবে। আরবের মরুভূমির প্রাণী দুম্বা। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় দুম্বা পালনে দেখা দিয়েছে নতুন বাণিজ্যিক সম্ভাবনা।

টিএমএসএস’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপিকা ড. হোসনে আরা বেগম জানান, পবিত্র ভূমি মক্কার পশু দুম্বা। দুম্বা খামারে সফলতা পেলে আগামীতে বড় পরিসরে দুম্বার খামার গড়া হবে। বেকার ও অবহেলিত নারীদের দিয়ে খামার গড়ে দুম্বার বাণিজ্যিকতা পাবে। আর সেটিতে হবে বগুড়ার যুবকদের কর্মস্থল।

বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, টিএমএসএস বহুমুখী কৃষি খামারে দুম্বা রয়েছে। দুম্বা পালনে সফলতা আসলে বগুড়ায় বেকারত্ব কমে যাবে। শুধু তাই নয়, দুম্বা পালন বেকার জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনের মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে। যা আগামীতে দুম্বা পালনে অনেকে আগ্রহী হবেন।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর