ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

এমএলএম কোম্পানি খুলে প্রতারণা, সেই ৩ মাদ্রাসা শিক্ষকসহ গ্রেফতার ৮
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
গ্রেফতার ব্যক্তিরা

সানরাইজ বিজনেস সার্ভিস লিমিটেড (এসবিএসএল) নামে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি খুলে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তিন মাদ্রাসা শিক্ষকসহ আট প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব সদস্যরা। শনিবার বেলা ১১টায় র‍্যাব-১২ কুষ্টিয়া ইউনিটের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মো. ইলিয়াস খান সংবাদ সম্মেলন করে তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন-এসবিএসএল কোম্পানির চেয়ারম্যান ঝিনাইদহের শৈলকূপা থানার চর আউশিয়া গ্রামের মনিরুল ইসলামের ছেলে মো. সাজ্জাদ হোসেন (২৯), কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ঝিনাইদহের মহেশপুর পদ্মপুকুর গ্রামের আব্দুল গফুরের ছেলে মহসিন আলী (৩১), কোম্পানির ফিন্যান্স ডিরেক্টর কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার গোবরা গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে মো. ইমরান হোসেন (২৮), কোম্পানির কর্মী কুমারখালী উপজেলার বেতবাড়ীয়া গ্রামের জলিল বিশ্বাসের ছেলে মো. হাসান আলী (২৮), মহেন্দ্রপুর গ্রামের মৃত আমজাদ হোসেনের ছেলে মো. আব্দুল হান্নান (৪৩), ওয়াশি গ্রামের মৃত লিয়াকত আলীর ছেলে মো. মোস্তফা রাশেদ পান্না (৪৭), বাঁশ গ্রামের আলাউদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে মো. আইয়ুব আলী (২৮) ও বহল বাড়িয়া এলাকার আলতাফ শেখের ছেলে মো. হাফিজুর রহমান (২৮)।

র‍্যাব জানায়, প্রতারক চক্রটি কুষ্টিয়ায় এসবিএসএল নামে একটি এমএলএম কোম্পানি খুলে গ্রাহকদের অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যায়। কোম্পানিটির প্রতারণার ফাঁদে পড়ে প্রায় ৩০০ পরিবার সর্বশান্ত হয়েছে। কুষ্টিয়া ছাড়াও ওই কোম্পানি ঝিনাইদহ, মাগুরা, যশোর, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা ও রাজশাহী জেলা পর্যন্ত প্রতারণার জাল ফেলে। প্রতারণার কৌশল হিসেবে কোম্পানির নিজস্ব ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে গ্রাহকদের বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে গ্রাহকদের ১২০০ টাকা দিয়ে কোম্পানির আইডি খুলতে বলা হতো। প্রতি আইডি থেকে প্রতিদিন ১০ টাকা ও আইডি বাবদ প্রদানকৃত ১২০০ টাকার সমমূল্যের পণ্য দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হতো। শুরুর দিকে কিছু গ্রাহক টাকা ও পণ্য পাওয়ার কারণে অনেকেই আইডি খুলতে উৎসাহিত হয়েছিল। এক সময় গ্রাহকদের লভ্যাংশের টাকা না দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় প্রতারক চক্রটি।

চক্রটির প্রতারণার বিষয়ে একজন ভুক্তভোগী ২৬ আগস্ট কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কুমারখালী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সিপিসি-১, কুষ্টিয়া ক্যাম্প র‍্যাব ১২-এর একটি আভিযানিক দল র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহায়তায় শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার সময় কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই কোম্পানির পাঁচজন জন সদস্য এবং পরে তাদের দেওয়া তথ্যমতে আরও তিনজনকে ঝিনাইদহ জেলা ও ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

র‍্যাব আরও জানায়, গ্রেফতার আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেছে। এসবিএসএল কোম্পানির বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর ও কুমারখালী থানায় দুটি মামলা রয়েছে। এছাড়া কোম্পানির চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে দুটি চেক জালিয়াতির মামলা, ম্যানেজিং ডিরেক্টর মহসিন আলীর বিরুদ্ধে একটি চেক জালিয়াতি ও পাঁচটি স্ট্যাম্প জালিয়াতির মামলা এবং ফিন্যান্স ডিরেক্টর ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধে দুটি চেক জালিয়াতির মামলা রয়েছে। গ্রেফতার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বুধবার রাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে তিন মাদ্রাসা শিক্ষকসহ পাঁচজনকে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধান না পেয়ে বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী দুটি পরিবার কুমারখালী থানায় এ ব্যাপারে সাধারণ ডায়েরি করেন। গ্রেফতার আটজনের মধ্যে নিখোঁজ হওয়া ওই পাঁচ ব্যক্তিও রয়েছেন।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর