ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পার্বত্যাঞ্চলে মাসব্যাপী চীবর দানোৎসব
ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি
ফাইল ছবি

গাছের শেকড়, গুঁড়ি, ছাল, শুকনো পাতা ও ফুল থেকে রঙ। তুলা থেকে সুতা। সুতা থেকে কাপড়। আর সে কাপড় সেলাই করে তৈরি করা হয় চীবর। তাও আবার কোমড় তাঁতে তৈরি করতে হয় মাত্র ২৪ ঘণ্টায়। এ পোশাক তৈরি অনেকটা কঠিন হওয়ায় নৃ-গোষ্ঠীরা এটিকে কঠিন চীবর বলে থাকেন। পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারীরাই এ চীবর তৈরিতে অংশগ্রহণ করেন।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মতে, প্রবারণা পূর্ণিমার পর থেকে এ কঠিন চীবর দান উৎসব শুরু হয় মাসব্যাপী। তবে এ প্রস্তুতি চলে চীবর দানোৎসবের শুরুর একমাস আগ থেকে।

রাঙামাটির মত্রী চাকমা জানান, চীবর হচ্ছে বৌদ্ধ ভান্তেদের পরিদানের একটি বিশেষ বস্ত্র। এটাকে কঠিন চীবর বলা হয়। কারণ এ চীবর তৈরি করা অনেক কষ্টের এবং কঠিন তাই। বাঁশ বাগান থেকে কাঁচা বাঁশ সংগ্রহ করে তৈরি করা হয় রদাং অর্থাৎ কোমড় তাঁত ও চরকা।

এরপর গাছের ছাল বাকল থেকে রঙ তৈরি করতে হয়। একই সাথে জুম থেকে তুলা সংগ্রহ করতে হয়। সংগৃহীত তুলা ও রঙ একসাথে করে সুতা প্রস্তুত করে বুনন করতে হয় চীবর। উৎসবের দীন বিহারগুলোতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীরা ২৪ ঘণ্টায় এসব কাজ সম্পন্ন করে বৌদ্ধ ভিক্ষু ও ভান্তেকে দান করেন। এটাতে অংশগ্রহণ করা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের এক পুণ্যের কাজ। তাই সব বয়সের নারী-পুরুষের সমাগম হয় এ উৎসবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে রাঙামাটির বিভিন্ন বিহারে শুরু হয়েছে কঠিন চীবর দান উৎসব। রাঙামাটির আসামবস্তী বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহার ও উলুছড়ি ছাবা বৌদ্ধ বিহারে এরই মধ্যে শেষ হয়েছে চীবর উৎসর্গের কার্যক্রম। তবে মাসব্যাপী চলবে তিন পার্বত্য জেলা রঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের বিভিন্ন বিহারে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দান। এতে যোগ দান করতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছুটে আসে হাজারো পুণ্যার্থী ও ভক্তরা।

রাঙামাটি রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, বাংলা চন্দ্রপঞ্জিকা অনুযায়ী প্রবারণা পূর্ণিমার (ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা) পর চীবর দান উৎসব শুরু হয়। এ অনুষ্ঠানে মূলত বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরকে ত্রি-চীবর নামে বিশেষ পোশাক দান করা হয়। ত্রি-চীবর হলো চার খণ্ডের পরিধেয় বস্ত্র।  যাতে রয়েছে-দোয়াজিক, অন্তর্বাস, চীবর ও কটিবন্ধনী। এ পোশাক পরতে দেওয়া হয় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা যখন তিন মাস বর্ষাবাস শেষে বিহারে, তখন তাদের চীবরদানের অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে বরণ করেন ভক্তরা।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর