ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে উত্তরবঙ্গের পালাটিয়া
সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

নানা রকম অসুখ বিসুখ থেকে মুক্তি অথবা সন্তানহীন পরিবারে সন্তান লাভের আশায় এখনো উত্তর বঙ্গের কয়েকটি জেলায় মঞ্চস্থ হয় ঐতিহ্যবাহি লোকনাট্য সত্যপীর। হাজার বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী এই লোকনাট্য পালাটিয়া নামে পরিচিত। নানা প্রতিবন্ধকতায় কালের গহ্বরে বিলিন হয়ে যাচ্ছে এই লোকনাট্য। শিল্পীরা চান সহযোগিতা। 

পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে লাঠুয়াপাড়া গ্রাম। এই গ্রামের দুলুমিঞার ছেলে জন্ম থেকেই খিচুনি রোগে আক্রান্ত। বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে কয়েক লাখ টাকা খরচ করেও ছেলে সুস্থ হয়নি। পরে পাড়া প্রতিবেশির পরামর্শে মানত করেন সত্যপীরের গান। তিন দিনব্যাপি এই লোকনাট্য আয়োজন করেন দুলুমিঞা। তিনি এবং তার স্ত্রী বিশ্বাস করেন সত্যপীরের পালা আয়োজনের পরে তার ছেলে সুস্থ হয়ে যাবে। 

সম্প্রতি এই লোকশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় পঞ্চগড়ের নাট্যদল ভূমিজ আয়োজন করে পালাটিয়া উৎসব।

ভূমিজের নাট্যকর্মী মোস্তাক আহমেদ জানান, পালাটিয়া বা সত্যপীরের গান, এ অঞ্চলকে সমৃদ্ধ করলেও বর্তমানে চর্চার অভাবে তা বিলীন হতে শুরু করেছে। পালাটিয়া একটি জীবনাচরণের দর্শন। সহজ সরল এবং অতিথি পরায়ণ মানুষের প্রতিচিত্র। পালাটিয়ায় ফুটে ওঠে এ অঞ্চলের মানুষের সুখ, দুঃক্ষ, হাসি, আনন্দের অবিমিশ্র রুপ। পালাটিয়াকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। 

গবেষক ও গল্পকার শফিকুল ইসলাম জানান, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাহীন গ্রামীণ শ্রমজীবি অথবা কৃষিজীবি মানুষেরাই নিজেদের মতো করে এই নাটকে অভিনয় করে থাকেন। আয়োজকদের উদ্যোগে এই নাটক ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত টানা মঞ্চস্থ হয়। চার পাশে গোল হয়ে দর্শকেরা নাটক উপভোগ করে। মঞ্চের মাঝখানে বাদকের দল বসে। চার পাশে ঘুরে ঘুরে নাচ, গান ও অভিনয়ের মাধ্যমে এই নাটক তুলে ধরেন শিল্পীরা। নাটকের সমস্ত কলা কৌশল প্রক্ষেপণ করা হয়। আজও এই পালাটিয়া নাট্য রীতি নিয়ে বা উত্তরবঙ্গের সহজ জীবনাচারণের দর্শন নিয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি। 

স্থানীয় দর্শকরা জানান, এই গান শুনতে তাদের ভালো লাগে। পালাটিয়া যাতে সবসময় আয়োজন করা হয় এমনটাই দাবি তাদের। 

জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম জানান, উত্তরবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ লোকঐতিহ্য পালাটিয়া। পালাটিয়া এ অঞ্চলের মানুষের হৃদয়ের ভাষা ও আবেগ মিশ্রিত একটি মহান দর্শণ। এই লোকশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে আমরা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তবে স্থানীয় সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এগিয়ে আসতে হবে। 

বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন



এই পাতার আরো খবর