ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

রংপুর বিভাগে ৪ হাজার ৬১৯ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই
নজরুল মৃধা, রংপুর

শহীদ মিনার ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের প্রতীক অথচ রংপুর বিভাগের ৫০ শতাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। স্বাধীনতার অর্ধশতক বছর পেরিয়ে গেলেও ওইসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার গড়ে না ওঠায় শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান করতে পারছে না।

বিভাগের ৮ জেলায় ৯ হাজার ৫৪৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার রয়েছে ৪ হাজার ৯২৫টিতে। বাকি ৪ হাজার ৬১৯টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। তবে বিভাগের মধ্যে দিনাজপুর জেলায় প্রায় শতভাগ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। সবচেয়ে কম শহীদ মিনার রয়েছে গাইবান্ধা জেলায়।

রংপুর প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর জেলার ১ হাজার ৪৫৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার রয়েছে ৮৩৫টিতে, বাকি ৬২৩টিতে নেই। ঠাকুরগাঁওয়ে ৯৯২টির মধ্যে ৩৫৪টিতে রয়েছে, বাকি ৬৩০টিতে নেই। পঞ্চগড়ে ৬৬৩টির মধ্যে রয়েছে মাত্র ১২৩টিতে। এখানে ৫৫৪টিতে নেই।

দিনাজপুরে ১ হাজার ৮৭০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১ হাজার ৮৬৪টিতে রয়েছে। এই জেলায় মাত্র ৬টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। নীলফামারীতে ১ হাজার ৮৫টির মধ্যে রয়েছে ৮৩২টিতে, নেই ২৫৩টিতে। লালমনিরহাটে ৬৬৮টির মধ্যে রয়েছে ৪৪৭টি, বাকি ২২১টিতে নেই। কুড়িগ্রামে ১ হাজার ২৪০টির মধ্যে রয়েছে ২১৬টি রয়েছে, বাকি ১ হাজার ২৪টিতে নেই। গাইবান্ধায় ১ হাজার ৪৬৫টির মধ্যে রয়েছে ২৫৪টির, বাকি ১ হাজার ২১০টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, তারা জাতীয় দিবসগুলোতে বাঁশ, কাগজ দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করে তাতেই শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিচ্ছেন।

রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ, শালবন এলাকায় বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই শিক্ষক শিক্ষার্থীরা অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করে দিবসটি পালন করে থাকেন। আবার কেউ কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।

ভাষা আন্দোলনের এত বছর পরেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেন শহীদ মিনার নির্মাণ করা হলো না-এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রধান শিক্ষকরা তাদের মতামত ব্যক্ত করে বলেছেন, বিদ্যালয়গুলোতে সরকারিভাবে শহীদ মিনার নির্মাণে বরাদ্দের অভাব। এছাড়া বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণে বেসরকারিভাবে কেউ এগিয়ে আসে না। অনেক বিদ্যালয়ে জায়গা স্বল্পতার কারণে শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তারা বলছেন ভাষা শহীদদের স্মরণ করতে পর্যায়ক্রমে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরি করতে হবে।

মাহিগঞ্জ এলাকার অভিভাবক ও শিক্ষক হাসেম আলী জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার না থাকায় জাতীয় দিবসগুলোতে শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে পারছে না। যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, সেসব বিদ্যালয়ে জরুরি ভিত্তিতে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিকের উপ-পরিচালক মো. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, সেই সব বিদ্যালয়ের তালিকা করে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। বেশকিছু বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর