ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের বৈরী যুগে লালনের গান হতে পারে প্রতিবাদের শিল্প-শান্তির প্রতীক
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেছেন, লালন ফকির বিশ্বাস করেছিলেন, মানুষ শ্রেষ্ঠ। লালনের গানে বিশ্ব-মানবমৈত্রীর উপকরণ আছে। আজ আবার নতুন করে সাম্প্রদায়িকতা-মৌলবাদের উত্থানকালে মনুষ্যত্ব-মানবতার লাঞ্ছনার সময়ে সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের বৈরী যুগে লালনের গান হতে পারে প্রতিবাদের শিল্প-শান্তি ও শুভবুদ্ধির প্রতীক। মানুষের প্রতি হারানো বিশ্বাসকে ফিরিয়ে আনার পরম পাথেয়। লালন তার গানে মানুষ এবং মানুষকেই বড় করে দেখিয়েছেন। লালন মনে করতেন মানুষের মাঝেই এক ‘মনের মানুষ’ এর বসবাস যার প্রকৃত রূপ সৃষ্টিকর্তা।

রবিবার রাতে ছেঁউড়িয়ার আখড়া বাড়ীতে লালন একাডেমির আয়োজনে তিন দিনব্যাপী বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের স্মরণ উৎসব (দোলপূর্ণিমা)।  অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, লালন সাঁই জাত-ধর্মের সীমাবদ্ধতার বাইরে মানুষকে সবার উপর তুলে ধরেছেন। মৃত্যুর ১৩৫ বছর পরও লালন সাঁই দেশ ও জাতির জন্য আজও সমান প্রাসঙ্গিক, জনপ্রিয় ও আধুনিক। মানুষকে শান্তির পথ দেখিয়েছে লালন সাঁইয়ের মানবতাবাদ ও বাউলতত্ত্ব। লালন সাঁইয়ের বাউল মতবাদ আজ বিশ্বে সর্বজনীন হয়ে উঠেছে। মানবসেবার ব্রত নিয়ে অসংখ্য গান লিখে গেছেন তিনি। তার এই অমর সৃষ্টি সংগীত কোনো ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। একদিকে যেমন তার সৃষ্টি ছড়িয়েছে বিশ্বে তেমনি তাকে নিয়ে উন্নতর গবেষণা হচ্ছে। এই মহাজ্ঞানী মহাত্মা লালনের সৃষ্টির কৃর্তি আজ আর কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ীর মধ্যে আবদ্ধ নেই। তার দর্শন মানুষকে শান্তির পথ দেখায়, সুখের সন্ধান মেলে, জাগতিক মোহ থেকে রাখে মুক্ত।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, তার কর্মসাধনা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে  বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। সাধুরা এই আখড়াবাড়ীতে এসে সত্য পথে চলার মন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে নিজেদের আলোকিত করছেন। আজকের আধুনিক পৃথিবীতে যেসব লেখক গবেষক বাউলসম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ওপর বই লিখেছেন আমি তাদের প্রত্যেককে আহ্বান জানাব, তারা যেন নিজ দায়িত্বে কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়াতে লালন একাডেমির লাইব্রেরীতে এক কপি করে জমা দিয়ে যান। এতে করে দেশ-বিদেশের উৎসুক ভক্ত-গবেষক ও আজকের প্রজন্ম লালন সাঁই সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারবে। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আজকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে থাকা ভোলাই সাঁইয়ের লেখা লালনের গানের খাতা ফেরত পাওয়ায় এ অঞ্চলের বাউল গবেষকদের প্রাণের দাবি পূরণ হলো। এজন্য আমরা অধ্যাপক শক্তিনাথ ঝাঁ-এর কাছে তথা ভারত সরকারের কাছে চিরকৃজ্ঞ।

বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের স্মরণ উৎসবের দ্বিতীয় দিন রবিবার রাতে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের সংসদ সদস্য  ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যাপক শক্তিনাথ ঝাঁ,লালন একাডেমির এডহক কমিটির সদস্য তাইজাল আলী খান, বিএমএ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. এ.এফ.এম আমিনুল হক রতন, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি আল মামুন সাগর, চাপড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনামুল হক মঞ্জু,বিশিষ্ট কবি ও লেখক আম আরা জুঁই প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন লালন একাডেমির সাবেক সহ-সভাপতি ও দৈনিক বাংলাদেশ বার্তা পত্রিকার সম্পাদক আবদুর রশীদ চৌধুরী। লালন সাঁইজির ধ্যান-সাধনা, রচনা ও বাউলতত্ত্ব নিয়ে আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন লেখক ও গবেষক ড. আমানুর আমান। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন লালন একাডেমির এডহক কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহিদ হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন লালন একাডেমির এডহক কমিটির সদস্য সেলিম হক।

আলোচনা শেষে অতিথিদের কুষ্টিয়া লালন একাডেমির পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া, আত্মসুদ্ধির প্রতীক একতারা ও নবনির্মিত একতারার ক্রেস্ট উপহার দিয়ে বরণ করে করে নেওয়া হয়।  অনুষ্ঠানে ভারত থেকে আগত পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট গবেষক ড. শক্তিনাথ ঝাঁ শান্তিনিকেতনে থাকা লালন সাঁইয়ের প্রায় আড়াইশর বেশি গানের একটি পাণ্ডুলিপি লালন একাডেমির সভাপতি ও কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের হাতে হস্তান্তর করেন।

দ্বিতীয় পর্বে পশ্চিমবঙ্গ ও দেশীয় শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। বাংলাদেশের প্রখ্যাত লালন সংগীত শিল্পী উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন লালন একাডেমির সাবেক সদস্য বাউল আব্দুল কুদ্দুস। সংগীত পরিবেশন করেন সমির বাউল, খুরশিদ আলম, সুফিয়া কাঙালিনী। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই সংগীত পরিবেশন। স্মরণোৎসব অনুষ্ঠানের সার্বিক উপস্থাপনা ও পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্টেট সিফাতুন নাহার ও কাজী শারমিন নেওয়াজ  সংগীতানুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন ফারহানা ইয়াসমিন ও কনক চৌধুরী।

বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল



এই পাতার আরো খবর