ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পিরোজপুরে গৃহবধূ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন, ঘাতক স্বামী গ্রেফতার
পিরোজপুর প্রতিনিধি
ছবি- বাংলাদেশ প্রতিদিন।

পিরোজপুরের নাজিরপুরে নিখোঁজের চার মাস পর বালি চাপা দেয়া গৃহবধুর লামিয়ার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য উন্মোচন কররেছে পিবিআই। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আসামি লামিয়ার স্বামী তরিকুল ইসলামকে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

শুক্রবার (১৭ মার্চ) দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ সব তথ্য জানান পিবিআই, পিরোজপুর কার্যালয়। গ্রেফতার স্বামী মো. তরিকুল ইসলাম (২২) পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার দক্ষিণ চিথলিয়া গ্রামের মিজান খানের পুত্র। 

পিবিআই পিরোজপুর কার্যালয়ের সাব-ইন্সপেক্টর রিফাত ইমরান জানান, গত সোমবার ৪ মাস ধরে নিখোঁজ গৃহবধূর একটি লাশ জেলার নাজিরপুর উপজেলার সাতকাসেমিয়া গ্রামের মোজাহার মোল্লার বাড়ির পশ্চিম পাশে বালুর মাঠ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে এ ঘটনায় থানা পুলিশের পাশাপাশি ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেফতারের ছায়াতদন্ত করে পিবিআই, পিরোজপুর টিম। পরবর্তীতে গত বৃহস্পতিবার পিবিআই, পিরোজপুর জেলা মামলাটি স্ব-উদ্যোগে গ্রহণপূর্বক মামলার তদন্তভার ইন্সপেক্টর মো. বায়েজীদ আকনের উপর অর্পণ করে। 

তিনি আরও আরো জানান, তদন্তভার প্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বৃহস্পতিবার  ঢাকার মোহাম্মদপুর থানাধীন জাফরাবাদ এলাকার সাদেক খান রোডস্থ  মোহাম্মদ আলী খানের ভাড়া বাসা থেকে ভিকটিম লামিয়া আক্তারের স্বামী মো. তরিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আসামি তরিকুল ইসলাম নিজের দোষ স্বীকার করে পুলিশকে জানায় ২০১৯ সালের শেষের দিকে ভিকটিম লামিয়ার সাথে তরিকুলের প্রেমের  সম্পর্ক তৈরি হয়। তখন আসামি তরিকুল ইসলাম দশম শ্রেনীর ছাত্র এবং লামিয়া ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী  ছিল। গত বছর ২০২২ সনে মে মাসের শেষের দিকে ঈদের ছুটি শেষে যেদিন বাড়ি থেকে আসামি ঢাকায় যাবে সেদিন ভিকটিম লামিয়া আসামির বাড়িতে এসে ওঠে। 

তিনি জানান, ফেসবুকে 'তানিশা  তানজিম' নামক একটি আইডি থেকে লামিয়ার দুইটি নগ্নছবি ছড়িয়ে পরার কারণে লামিয়া আসামিকে দায়ী করায় এবং স্থানীয় লোকজনের চাপে ওই দিন সন্ধ্যায় তরিকুল ভিকটিম লামিয়াকে বিয়ে করে। সেই বিয়েতে আসামী তরিকুলের পিতা-মাতার অসম্মতি ছিল। তাদের  বিবাহ মেনে না নেয়ায় বিয়ের পর লামিয়া তার বাবার বাড়িতেই থাকত। সেখানে আসামীর যাতায়াত ছিল। বিয়ের সাত মাস পর লামিয়াকে তার বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়িতে তুলে নিতে না চাইলে লামিয়া ও তরিকুলের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। গত ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর রাতে আসামি তরিকুল লামিয়ার সাথে গোপনে দেখা করে। তরিকুল ভিকটিম লামিয়ার বাপের বাড়ি গিয়ে ঘরের বাইরে থেকে লামিয়াকে ডাক দিলে সে ঘরের বাইরে এসে তরিকুলের সাথে দেখা করে এবং ঘরের পাশের কলপাড়ে বসে তাদের সম্পর্কের বিচ্ছেদ নিয়ে কথা বলে। কথা বলার এক পর্যায়ে লামিয়ার মা ও নানী বাইরে থেকে বাড়িতে চলে আসে তখন ভিকটিম  বাড়ির ভিতর চলে যায়। পরবর্তীতে লামিয়ার মা ও নানী ঘুমালে লামিয়াকে পুনরায় বাড়ি থেকে বের হয়ে তরিকুলের সাথে দেখা করে। ওই রাতেই কথাবার্তার একপর্যায়ে তরিকুল রাগে লামিয়ার গলা টিপে তাকে হত্যা করে। এরপর লামিয়ার লাশ টেনে বালুর মাঠে নিয়ে যায়। মাঠের পাশের এক বাড়ির গোয়াল ঘর থেকে একটি বেলচা নিয়ে সেখানে খুড়ে লাশ বালু চাপা দিয়ে রাখে। 

সাব-ইন্সপেক্টর রিফাত ইমরান জানান, পরবর্তীতে ঘটনার চার মাস পর গত ১১ মার্চ আসামি তরিবুল মানসিক পীড়ায় অতিষ্ট হয়ে ভিকটিমের লাশ তার পরিবারের দৃষ্টি গোচরে আনার জন্য নাজিরপুর বাজারের একটি দোকান থেকে দুটি গ্লাভস কেনেন। এরপর রাতট পুনরায় ঘটনাস্থলে গিয়ে বালুর ঢিবিতে বেলচা দিয়ে খোড়ার পর লাশের হাত দেখতে পেয়ে লাশের হাত ধরে ওঠানোর চেষ্টা করলে লাশের হাত দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে হাতটা গর্তে রেখে  পুনরায় লাশ বালু চাপা দিয়ে আসে। পরদিন রাতে আসামি তরিকুল একটি চিরকুট লিখে লামিয়ার ঘরের চালে ঢিল মারে। তখন ঘর থেকে লামিয়ার খালা ও নানী বাইরে বের হয়ে চিরকুট দেখতে পায়। আসামি তখন খালের অপর পাড়ে বসে ছিল। এরপর লামিয়ার পরিবারের লোকজন টর্চলাইট মারলে আসামি দৌড়ে সেই স্থান ত্যাগ করে। সেই রাতে কালিবাড়ির একটি বাগানে অবস্থান  করে পরদিন আসামি তরিকুল ঢাকায় তার বাবার বাসায় চলে যায়।

উল্লেখ্য, নিখোঁজের চার মাস পর গত সোমবার (১৩ মার্চ) দুপুরে জেলার নাজিরপুর উপজেলার সাতকাসেমিয়া গ্রামের গ্রামের মোজাহার মোল্লার বাড়ির পশ্চিম পাশে বালুর মাঠ থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় গৃহবধূ লামিয়া আক্তার উদ্ধার করে পুলিশ। গৃহবধূ লামিয়া আক্তার (১৯) জেলার নাজিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের চিথলিয়া গ্রামের  নজরুল ইসলামের কন্যা এবং গ্রামের এলাকার মো. তরিকুল ইসলামের স্ত্রী।

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ



এই পাতার আরো খবর