ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

কক্সবাজার সীমান্তে বিজিবির পৃথক অভিযান
১৪.৭৭৮ কেজি আইস, তিন লাখ ৯০ হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক ৩
আব্দুস সালাম, টেকনাফ (কক্সবাজার)

বর্তমান সরকারের মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি যথাযথ বাস্তবায়নকল্পে মাঠ পর্যায়ে বিজিবির গোয়েন্দা তৎপরতা ও অভিযানিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) এবং কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) তাদের দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় পৃথক অভিযান পরিচালনা করেছে। এতে মোট ১৪.৭৭৮ কেজি ক্রিস্টাল মেথ বা আইস এবং ৩ লাখ ৯০ হাজার পিস ইয়াবাসহ ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।

বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়ন ও রামু সেক্টরের আওতাধীন টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) বুধবার রাতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারেন যে, এই ব্যাটালিয়নের অধীন দমদমিয়া বিওপি’র দায়িত্বপূর্ণ বড়ইতলী এলাকা দিয়ে মাদকের একটি বড় চালান মিয়ানমার হতে বাংলাদেশে আসতে পারে। এ তথ্যের ভিত্তিতে ব্যাটালিয়ন অধিনায়কের নেতৃত্বে ব্যাটালিয়ন সদর ও দমদমিয়া বিওপি হতে তিনটি পৃথক টহলদল ওই এলাকায় যায়। 

একটি টহলদল বেড়ীবাঁধের আঁড় নিয়ে কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে এবং অপর দু’টি টহলদল নাফ নদীতে টহলরত অবস্থায় থাকে। আনুমানিক রাত ৯টা ২০ মিনিটে বিজিবি টহলদল দুইজন ব্যক্তিকে একটি কাঠের নৌকাযোগে মিয়ানমার হতে সীমান্তের শূন্যলাইন অতিক্রম করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসতে দেখেন। তখন বিজিবি নৌ টহলদ্বয় নৌকাটিকে চ্যালেঞ্জ করে। বিজিবি'র উপস্থিতি টের পেয়ে নৌকায় থাকা ব্যক্তিরা মিয়ানমারের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন বিজিবি টহলদল দ্রুত ধাওয়া করে নৌকাসহ দু’জন মিয়ানমার নাগরিককে আটক করতে সক্ষম হয়। 

আটকরা হলেন মো. রবি মোল্লা (২৩)। তার বাবা মৃত আ. ছালাম। অপরজন মো. আয়াছ (২৫)। তার বাবার নাম আবুল কালাম। উভয়েই বুচিডং জেলার মংডু থানার প্রামপুর গ্রামের বাসিন্দা।

পরবর্তীতে বিজিবি টহলদল নৌকাটিকে নাফ নদীর তীরে এনে তল্লাশি করে। এতে নৌকার মধ্যে রাখা জালের ভেতরে অভিনব পদ্ধতিতে লুকায়িত অবস্থায় পলিব্যাগে মোড়ানো দুইটি পোটলা পাওয়া যায়। সেখান থেকে ৭.৩৮২ কেজি ক্রিস্টাল মেথ বা আইস ও ৩০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট মেলে। এসময় অবৈধ মাদকদ্রব্য বহনের জন্য ব্যবহৃত কাঠের নৌকা এবং ১০০ কেজি সুতার জাল জব্দ করা হয়। 

অপরদিকে, বিজিবি'র কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের (৩৪ বিজিবি)  অধিনায়ক গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারেন যে, কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী ক্রিস্টাল মেথ বা আইসের একটি চালান মিয়ানমার হতে বাংলাদেশে এনে সীমান্ত এলাকায় গুদামজাত করবে। এ সংবাদের ভিত্তিতে অধিনায়কের দিকনির্দেশনায় রেজুপাড়া বিওপির একটি টহলদল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাধীন ঘুমধুম সীমান্তের ফুটেরঝিরি নামক স্থানে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে। এতে পরিত্যক্ত অবস্থায় মালিকবিহীন ৭.৩৯৬ কেজি ক্রিস্টাল মেথ বা আইস উদ্ধার করতে সক্ষম হন তারা।

এদিকে একই রাতে বিজিবি'র টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, অধীনস্থ সাবরাং বিওপি’র দায়িত্বপূর্ণ দক্ষিণ নোয়াপাড়া এলাকা দিয়ে মাদকের একটি চালান মিয়ানমার হতে বাংলাদেশে পাচার হতে পারে। এ তথ্যের ভিত্তিতে সাবরাং বিওপি’র একটি টহলদল ওই এলাকায় যায়। তারা বেড়িবাঁধের আঁড় নিয়ে কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে। আনুমানিক রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে টহলদল দু’জন ব্যক্তিকে একটি পোটলা হাতে নিয়ে নাফ নদী পার হতে দেখেন। তারা সীমান্তের শূন্যলাইন অতিক্রম করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসতে থাকেন। তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক পরিলক্ষিত হয়। তাই বিজিবি টহলদল তাদের চ্যালেঞ্জ করে। বিজিবি'র উপস্থিতি অনুধাবন করা মাত্রই ওই ব্যক্তিরা তাদের হাতে থাকা পোটলা মাটিতে ফেলে অন্ধকারের সুযোগে পার্শ্ববর্তী গ্রামের দিকে দ্রুত পালিয়ে যান। পরবর্তীতে বিজিবি টহলদল উল্লিখিত স্থানে পৌঁছে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করে। সেখানে ফেলে যাওয়া পোটলার ভেতর হতে ৫০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করতে সক্ষম হন তারা। 

এছাড়া গোপন সংবাদের ভিত্তিতে টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধীন নাজিরপাড়া বিওপি’র টহলদল জানতে পারে যে, দায়িত্বপূর্ণ আলুগোলা এলাকা দিয়ে মাদকের একটি চালান মিয়ানমার হতে বাংলাদেশে আসতে পারে। এ তথ্যের ভিত্তিতে নাজিরপাড়া বিওপি'র একটি টহলদল নাফ নদী সংলগ্ন কেওড়া বাগানের মধ্যে কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে। আনুমানিক রাত ১১ টা ৪০ মিনিটে টহলদল ৪/৫ জন ব্যক্তিকে একটি কাঠের নৌকাযোগে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্য লাইন অতিক্রম করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নাফ নদীর কিনারায় আসতে দেখে। এতে বিজিবি টহলদল তাদের চ্যালেঞ্জ করে। বিজিবি টহলদলের উপস্থিতি লক্ষ্য করামাত্রই তারা নৌকা হতে নাফ নদীতে লাফিয়ে মিয়ানমারের দিকে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে বিজিবি টহলদল ওই স্থানে পৌঁছে নৌকাটি তল্লাশি করে। সেখানে পাটাতনের নিচে লুকায়িত দুইটি প্লাস্টিকের বস্তার ভেতর হতে ২ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করেন তারা। 

এছাড়া আজ বৃহস্পতিবার সকালে টেকনাফ ব্যাটলিয়নের অধীন টেকনাফ বিওপি গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, দায়িত্বপূর্ণ নাইট্যংপাড়া ট্রলারঘাট এলাকা দিয়ে মাদকের একটি চালান মিয়ানমার হতে বাংলাদেশে আসতে পারে। এ সংবাদের ভিত্তিতে টেকনাফ বিওপি’র একটি টহলদল বর্ণিত এলাকায় যায়। তারা কেওড়া বাগানের আঁড় নিয়ে কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করেন। আনুমানিক সকাল ৮ টা ৩০ মিনিটে বিজিবি টহলদল ৩/৪ জন ব্যক্তিকে একটি ইঞ্জিন চালিত কাঠের নৌকাযোগে ট্রলার ঘাটের দিকে আসতে দেখেন। তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক পরিলক্ষিত হয়। তাই বিজিবি টহলদল তাদের চ্যালেঞ্জ করে। ওই ব্যক্তিরা দূর হতে বিজিবি'র উপস্থিতি অনুধাবন করামাত্রই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন তাদের মধ্য হতে একজনকে আটক করতে সক্ষম হয় টহলদল। অপরজন নাফ নদীতে লাফিয়ে মিয়ানমারের দিকে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে বিজিবি টহলদল আটক ব্যক্তির দেওয়া তথ্যমতে নৌকা ও মাছ ধরার জাল তল্লাশি করে। এতে জালের ভেতরে অভিনব পদ্ধতিতে লুকায়িত পলিব্যাগে মোড়ানো দুইটি পোটলা পাওয়া যায়। সেখানে ১ লাখ ১০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট এবং ২০০ কেজি সুতার জাল মেলে, যা জব্দ করা হয়েছে। আটক ব্যক্তি হলেন মো. জাহিদ হোসেন (২২)। তারা বাবার নাম আমির হোসেন। তিনি কক্সবাজারের টেকনাফ থানার নাইট্যংপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। 

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন



এই পাতার আরো খবর