ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

শুরু হচ্ছে কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ
ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

টানা ৪ মাস ১২দিন পর রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে শুরু হচ্ছে মৎস্য আহরণ। আগামী ৩১ আগস্ট রাত ১২টা ১মিনিট থেকে মাছের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান । তিনি বলেন, সেদিন মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে জেলেরা মাছ আহরণ শুরু করতে পারবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের মিঠা পানির মাছের ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম জলরাশি রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ। রাঙামাটির মাছের চাহিদা মিটিয়ে এ মাছ রফতানি করা হয় দেশে-বিদেশে। এ মাছের ওপর জীবন-জীবিকা নির্ভর প্রায় ২৬ হাজার ৭৮০ মৎস্যজীবী পরিবারের। তাই প্রতি বছর ৯ মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ চলমান থাকলেও ৩ মাস বন্ধ রাখতে হয়। মাছের সুষ্ঠু প্রাকৃতিক প্রজননের বৃদ্ধি ও মা মাছ নিধন রোধের লক্ষ্যে। তবে এ বছর ছিল ভিন্ন চিত্র। রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর কম থাকায় বন্ধকালী সময় ছিল ৪ মাস ১২ দিন। আর বন্ধকালীন সময় কাপ্তাই হ্রদে পোনা মাছ অবমুক্ত করা হয় প্রায় প্রায় ৫৬ মেট্রিক টন। যাতে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে পর্যাপ্ত মাছ আহরণ করা হয়।

অন্যদিকে এরই মধ্যে রাঙামাটি মৎস্য উন্নয়ন অধিদপ্তরের উন্নয়ন ও বিপণী কেন্দ্র অর্থাৎ ফিসারিঘাটে শুরু হয়েছে মৎস্যজীবীদের কর্ম ব্যস্ততা। মাছ আহরণের আগেই পরিষ্কার করা হচ্ছে পল্টন ও বরফকল। নতুনভাবে রঙ করা হচ্ছে মাছ রাখার পাত্র। ঠিক করা হয়েছে পরিবহনও। 

রাঙামাটি মৎস্যজীবী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি মো. মুজিবুর রহমান বলেন, গত ৪ মাস ১২দিন একটা শঙ্কার মধ্যে ছিলাম। কারণ কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছিল না। পর্যাপ্ত বৃষ্টি পাত না হওয়ার কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর একেবারে কমছিল। যার কারণে তিন মাসের চেয়ে অধিক সময় মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু মাছ শিকার না করলে মৎস্যজীবীরা না খেয়ে মারা যাবে। ব্যবসা নাথাকলে দেশের এমন ক্লান্তিকালে মানুষ কিভাবে চলবে।

একইভাবে শঙ্কা প্রকাশ করেন আরেক ব্যবসায়ী মো. আলী আকবর। তিনি বলেন, দেশের সব কিছুর দাম বৃদ্ধি। তাই জেলেদের দাদন (এক কালিন টাকা) হিসেবে বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে। একই সাথে পরিবহণে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। শ্রমিক কর্মচারীদেরও বেতন বৃদ্ধি করতে হচ্ছে। মাছ আহরণ যদি বৃদ্ধি পাই তাহলে এ খরচ পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

অন্যদিকে এরই মধ্যে জেলেদের কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বলেছে বিএফডিসি। তবে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু নির্দেশনা। এ ব্যাপারে রাঙামাটি মৎস্য উন্নয়ন অধিদপ্তরের উন্নয়ন ও বিপণী কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. আশরাফুল আলম ভূঁইয়া বলেন, আমি বিএফডিসিতে যোগ দান করার পর এখন পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে বন্ধকালীন সময় মাছের সুরক্ষার জন্য ৭২৬টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসব অভিযানে ৩ হাজার ৪৭৩ কেজি মাছ জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া বোট জব্দ করা হয় ২৪৬টি। আর জাল জব্দ করা হয় ১.৫ লক্ষ্য মিটার। তিনি আরও বলেন, আমরা পুরোপুরি চেষ্টা করেছি। কাপ্তাই হ্রদে বন্ধকালীন সময় যাতে মাছ সুরক্ষিত থাকে। আর প্রকৃতি প্রজনন হয়। আশা করি আহরণের পর ব্যবসায়ীরা এ সুফল ভোগ করবেন। এছাড়া মাছ আহরণ শুরু হলেও কাপ্তাই হ্রদের মাছের অভয় আশ্রমগুলো সংরক্ষিত থাকবে আগের মত। অভয় আশ্রমে মাছ ধরা যাবে না। একই সাথে পোনা মাছ নিধন করা যাবে না। জেলেদের এ বিষয়ে সর্তক করা হয়েছে। এছাড়া শুল্ক আদায়সহ অন্যান্য কাজগুলোর প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল



এই পাতার আরো খবর