ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

‘আবেগ দিয়ে জীবন চলে না’, চিরকুট লেখা শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
ফিরোজ মোল্যা। ফাইল ছবি

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে চিরকুট লিখে একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহতের নাম ফিরোজ মোল্যা। তিনি বোয়ালমারী সরকারি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। 

২০২২ সালে বোয়ালমারী জর্জ একাডেমি থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় ফিরোজ। 

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত্যুর আগে ফিরোজের লিখে যাওয়া একটি সুইসাইড নোট আজ বুধবার রাতে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। 

থানা ও এলাকাসূত্রে জানা যায়, ফরিদপুরের বোয়ালমারী সরকারি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র ফিরোজ (১৮) ও তার ছোটভাই ফাহিম (১২) উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের চাপলডাঙ্গা গ্রামে নানা বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করেছিল। শৈশবেই তাদের বাবা নিরুদ্দেশ হয়ে তাদের ছেড়ে চলে যাওয়ায় মা ফিরোজা বেগম তার বাবার বাড়ি চাপলডাঙ্গায় তাদের রেখে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। নানা-নানির মৃত্যুর পর প্রতিবন্ধী এক মামাকে নিয়ে তারা নানাবাড়িতেই বসবাস করতো। ফিরোজ পড়ালেখার পাশাপাশি একটি বেসরকারি ক্লিনিকে দন্ত চিকিৎসকের সহযোগী ও কখনো কখনো নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। 

বুধবার বিকালে তিনি নানা বাড়ির পাশে মসজিদে আছরের নামাজ আদায় করেন। পরে বসতঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে আড়ার সাথে কাপড় পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেন বলে অভিযোগ। পরে পরিবারের লোকজন ঘরের দরজা ভেঙে তাকে দ্রুত বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

খবর পেয়ে বোয়ালমারী থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। 

মৃত্যুর আগে ফিরোজ সুইসাইড নোটে লিখে যান, ‘আমি জানি আমি কি করছি। জানি আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। কিন্তু, আমার কাছে যে আমার স্বপ্নগুলো অনেক দামি ছিল। হয়তো আমার জীবনের চেয়েও দামি। আমরা যেই সমাজে বসবাস করি সেই সমাজে স্বপ্ন পূরণ করতে অনেক টাকা; নয়তো মা-বাবা থাকা প্রয়োজন। যার কোনোটাই আমার কাছে নেই। আমি ওকে ভালোবাসতাম। আমার আবেগ মাখা কথাগুলো কারো বিবেকে লাগবে না, সেটা আমি জানি। আর আমি বোকা বলবো সেই সব মানুষদের যারা আমাকে একজন ভালো ছেলে ভাবতেন। আমি আসলে কখনোই ভালো ছিলাম না, শুধু ভালো থাকার অভিনয় করতাম। জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। আর কোনো কষ্ট করতে ও পেতে চাই না। তাই এই পথ বেছে নিলাম। আমাকে সবাই ঘৃণা করলেও যেন ভুলে যায়, এটাই আমার শেষ ইচ্ছা! চির বিদায় সবাইকে। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।’

লাশ উদ্ধারকারী বোয়ালমারী থানার উপ-পরিদর্শক মো. সরোয়ার হোসেন জানান, খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৯টায় হাসপাতাল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে বোয়ালমারী থানায় আনা হয়েছে। ঘটনাস্থল চাপলডাঙ্গা গ্রামের ফিরোজের বসতঘর থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ



এই পাতার আরো খবর