ঢাকা, মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

লালন আখড়া লোকারণ্য, ভেঙে যাচ্ছে সাধুসঙ্গ
জাহিদুজ্জামান, কুষ্টিয়া

ভেঙে যাচ্ছে জমজমাট সাধুর হাট। আখড়াবাড়ি খালি করে ছেড়ে যেতে শুরু করছেন সাধু-বাউলরা। বুধবার বিকাল ৩টার দিকে পূর্ণসেবা ছিল সাধুসঙ্গের শেষ আয়োজন। তবে, প্রশাসনের তিন দিনের লালন মেলার আয়োজন শেষ হবে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে। বলা হচ্ছে, অন্যবারের চেয়ে এবারের তিরোধান দিবসের এই লালন মেলায় সাধু-ফকির ও দর্শনার্থীরা ভিড় বেশি।

ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩৩তম তিরোধান দিবসে ১৭ অক্টোবর সন্ধ্যার পর শুরু হয় সাধুসঙ্গ। রাতেই হয় অধিবাস। পরদিন ১৮ অক্টোবর সকালে বাল্যসেবা এবং বিকাল ৩টায় পূর্ণসেবার মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে অষ্টপ্রহরের এই সাধুসঙ্গ। এবার এতো বেশি সাধু-ফকির ও বাউল আসেন কুষ্টিয়ায় যে ছেউড়িয়ার লালনের আখড়াবাড়ির ভেতরে পা ফেলার স্থানটুকু ছিল না। যে যেখানে পেরেছে আসন পেতে বসেছে। এমনকি অনেকেই পায়ে চলা রাস্তার ওপর আসন পাতেন। এসময়ে সাধু-ফকিররা তাদের সাঁইজির বাণী নিয়ে আলোচনা করেছেন। পুরো আখড়াবাড়ি যেমন জনারণ্য, তেমনি জাতপাতহীন, মানবতাবাদী, অহিংস.. লালন দর্শনের গানেও প্রকম্পিত। 

ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আসন পাতেন সাধু-বাউলরা। দলে একজন গুরু থাকেন বাকিরা শিষ্য। যেহেতু লালনের মৃত্যদিবস ঘিরে এবারের সঙ্গে সে কারণে দৈন্য প্রকাশের গানই শোনা গেছে চারিদিকে। আখড়াবাড়ির বাইরে মঞ্চেও আলোচনা ও গানেও প্রকাশ পেয়েছে লালনের তিরোধানের বিষয়টি। একই সঙ্গে ফুটে উঠেছে তার মানবতাবাদও। সাধু-বাউল ছাড়াও এবার দর্শনার্থীও ছিল অনেক বেশি। 

লালন একাডেমির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সেলিম হক বলেন, লালনের দর্শনের প্রচার বেড়েছে। তাই সেই আকর্ষণে দর্শনার্থীও আসছে বেশি। সন্ধ্যার দিকে কয়েক লাখ মানুষের ভিড় চলে আসে আশপাশের রাস্তায়। সবার লক্ষ্য যেখানে লালন ও তার ভক্তরা চিরনিদ্রায় শায়িত সেখানে যাবার। একারণে মানুষ গায়ে গায়ে লেগে যায়। এই ভিড় আগামীতে আরও বাড়বে। এতো ছোট জায়গায় এতো বেশি মানুষের জমায়েত সম্ভব নয় বলছেন- বাউল কুদ্দুস শাহ। তিনি এই জায়গা বাড়ানোর দাবি করেছেন।

আবার মিলিত হওয়ার আশা নিয়ে বুধবারই আখড়াবাড়ি ছেড়ে গেছেন অনেক সাধু-বাউল-ফকির। ফরাসি লালন গবেষক দেবোরাহ কিউকারম্যান বলেন, এটা সাধুর বাজার। এখানে সব রকমের মানুষই এসেছে। সারাজীবন গুরুর চরণে সপে দিয়ে ত্যাগী হয়েছেন এমন মানুষ যেমন আছেন, শুধু মজা দেখতে এসেছেন এমন মানুষ অনেক। এটা মহামিলন। এখানে আমরা নিজেদের পরীক্ষা করতে আসি। আমি এই ভিড়ে কতটুকু ধৈর্য্য কতটুকু সহিষ্ণু হতে পেরেছি। 

তিনি বলেন, মানুষ আধুনিক এই সময়ে যতো ভালোই থাকুক, আত্মসংস্কার না করতে পারলে তৃপ্তি পাবে না। তাই আমরা চরিত্র গঠনের মাধ্যমে আমরা সেই চেষ্টা করছি।  

বিদায়ের সময় অনেক সাধু-ফকির কান্না করেছেন। কেউ গেছেন চোখ মুছতে মুছতে। তবে, যার এলাকায় গিয়ে লালনের মানবতার দর্শন প্রচারের কথা বলেছেন সাধু-বাউলরা।

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত



এই পাতার আরো খবর