ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

তীব্র পানির সংকটে নাটোর রেলওয়ে স্টেশন, যাত্রীদের দুর্ভোগ
নাটোর প্রতিনিধি
ছবি- বাংলাদেশ প্রতিদিন।

দেশের উত্তরাঞ্চলের স্টেশনগুলোর মধ্যে ব্যস্ততম নাটোর স্টেশনে পানির চরম সংকট চলছে। গত পাঁচ মাস ধরে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তিতে পরছেন রেলের যাত্রীরা।

বাংলাদেশ রেলওয়ের  পশ্চিমাঞ্চলের স্টেশনগুলোর মধ্যে প্রাচীন ও বৃহত্তম  প্রাচীন একটি স্টেশন নাটোর । রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাই নবাবগঞ্জ  জেলার মধ্যবর্তী স্থানে স্থাপিত স্টেশনটি। এ কারণে স্টেশনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

প্রতিদিন ওইসব স্থানের যাত্রীরা নাটোর থেকে ট্রেনে যাতায়াত করেন। কিন্তু স্টেশনে নেই প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা। বৃহৎ এই স্টেশনে রয়েছে মাত্র একটি পানির টিউবওয়েল। তাও সেটি পাঁচ মাস ধরে বিকল থাকে। এছাড়া যাত্রী বিশ্রামাগারে সব সময় পানি মেলে না। স্টেশন এলাকায় নেই সরকারি টিবওয়েল। এর ফলে স্টেশনে পানির তীব্র সংকট চলছে।

উত্তরাঞ্চলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম এ স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন শত শত যাত্রী যাতায়াত করে। স্টেশনটির উপর দিয়ে আন্তঃনগর, মেইল, সাধারণ মেইল, মালামাল গাড়িসহ প্রায় ৩২টি ট্রেন প্রতিদিন চলাচল করে। নাটোর থেকে লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, রংপুর, লালমরিহাট, বগুড়া, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, খুলনা ও ঢাকা পথে প্রতিদিন ৩২টি ব্রড ও মিটার গ্রেজ ট্রেন চলাচল করে। ফলে দিনের ২৪ ঘণ্টাই স্টেশনে  যাত্রী সমাগম থাকে। এসময় যাত্রীরা পানির জন্য ছুঁটাছুঁটি করে।

ঢাকাগামী যাত্রী ওয়াকিল আহম্মেদ বলেন, পরিবার নিয়ে ঢাকা যাব, স্ত্রী স্টেশনে পানি পাচ্ছেন না। বাইরে থেকে যে তাকে পানি দেব তাও পেলাম না। বাধ্য হয়ে বোতল পানি ক্রয় করলাম। 

খুলনাগামী যাত্রী আব্দুর রহমান নামে একজন যাত্রী বলেন, এতো বড় স্টেশনে একটি মাত্র টিউবওয়েল তাও নষ্ট। পানির ট্যাপও নেই। ট্রেন যাত্রীরা ফ্রেশ হতেন এবং পানি পান করতেন। কিন্তু এটা এখন পুরোপুরি অচল। নাটোর রেলওয়ে স্টেশনে আর কোন সুপেয় পানির ব্লক নেই। একটি টিউবওয়েল রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ এটা মেরামত করতে পারেন না?

নাটোর সরকারি মহিলা কলেজের নুসরাত জাহান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ট্রেনেই বেশিরভাগ সময় যাতায়াত করতে হয়। পুরো স্টেশনে পানি নেই, ওয়াশ ব্লকটি অচল হওয়ায় হাত ধোয়ার জন্য হলেও পানি কিনতে হয়। সাধারণ যাত্রীদের অনেকের পানি কিনে পান করার ক্ষমতা নেই। রেল স্টেশনে যাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। এ কারণে স্টেশনে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের পানির জন্য এদিক ওদিক ছুটতে হয়। 

বর্তমানে স্টেশনে পানি সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। কিছুদিন আগেও স্টেশনে টিউবওয়েল বা ট্যাপকল চোখে পড়ত। ইদানিং নাটোর স্টেশনে তা আর দেখা যায় না। এখন যাত্রীদের প্লাস্টিক বোতলজাত পানিই একমাত্র ভরসা। তাও এই বোতলজাত পানি কতটা নিরাপদ ও বিশুদ্ধ তা দেখার জন্য কেউ নেই। তাই স্টেশনে অপেক্ষমান যাত্রীদের সেবার লক্ষ্যে নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা জরুরি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। রেলস্টেশন ব্যবহার করা যাত্রীদের অভিযোগ, প্রতিদিন এই দুইটি রেলস্টেশন দিয়ে অসংখ্য যাত্রী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু স্টেশন দুইটিতে যাত্রীসেবা নেই বললেই চলে।

১৮৭৮ সালে নাটোর স্টেশন স্থাপিত হয়। রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের স্টেশনগুলোর মধ্যে রাজস্ব আয়ের দিক দিয়ে নাটোর স্টেশন তৃতীয়। কিন্তু যাত্রীসেবার মান খুবই খারাপ। যাত্রীদের টয়লেটগুলোর অধিকাংশ ব্যবহারের অনুপযোগী। 

এ ব্যাপারে নাটোর স্টেশন মাষ্টার (ভারপ্রাপ্ত) মোছা. কামরুন নাহার বেগম  বলেন, পানির টিউবওয়েল অনেক আগের, মেরামত করলেও বার বার নষ্ট হয়। পানির সমস্যাসহ স্টেশনের বিভিন্ন সমস্যার কথা লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অনেকবার জানানো হয়েছে। পানির সংকট থাকায় আমাদের নানা সমস্যা পড়তে হচ্ছে। প্রায় পাঁচ মাসের উপরে টিউবওয়েলটি বিকল থাকায় পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় স্টেশন পরিচালনায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি বারবার অবগত করার পরও এখনও স্থায়ী কোনো সমাধান হচ্ছে না।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, নাটোর রেলওয়ে ষ্টেশনে পানির সংকটের ব্যাপারটি আমার জানা ছিল না। এখন জানলাম। খুব শীঘ্রই স্টেশনে পর্যাপ্ত পরিমাণ টিউবওয়েল এবং পানির ট্যাব বসানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে । 

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ



এই পাতার আরো খবর