শেরপুরে মেধা বৃত্তি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছে সাদেক আলী ফাউন্ডেশন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি জেলা সদরের চরজংগলদী রাহেতুন নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের অডিটোরিয়মে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাদেক আলী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, নিউইয়র্ক প্রবাসী লেখক-সাংবাদিক আবুল কাশেম ও বিশেষ অতিথি ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ভীমগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুলাল উদ্দিন মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাদেক আলী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আব্দুল করিম, ফাউন্ডেশনের অর্থ পরিচালক ফেরদৌসী বেগম, প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল-মামুন, স্কুল পরিচালনা পরিষদের সাবেক সদস্য মুক্তার হোসেন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ইঞ্জিনিয়ার আমজাদ হোসাইন, স্কুল পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য মুক্তার হোসেন, সোহাগ মিয়া, স্কুলের মৌলভী শিক্ষক আবদুল জলিল, এসএসসি পরীক্ষার্থী শিমুল মিয়া ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রমিলা খাতুন প্রমুখ।
প্রধান অতিথি সাদেক আলী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, সাংবাদিক আবুল কাশেম তার বক্তব্যে বলেন, তার বাবা সাদেক আলী উচ্চ শিক্ষিত মানুষ ছিলেন না, তবে তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত। তিনি একজন বিদ্যোৎসাহী, অসম্প্রদায়িক সাদা মনের মানুষ ছিলেন। তিনি এই অঞ্চলের প্রথিতযশা একজন পুঁথিপাঠক, অমর কথা সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের “বিষাদ-সিন্ধু” পাঠক ছিলেন। তিনি সব সময় সমাজের হতদরিদ্র মানুষে ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে ভাবতেন। তার দূরদর্শী ভাবনা-চিন্তা কে সমাজে স্থায়ীভাবে প্রতিফলিত করার জন্যই আমি এই ফাউন্ডেশন গঠন করেছি। এই ফাউন্ডেশন একটি অলাভজনক, অরাজনৈতিক ও সেবামূলক ফাউন্ডেশন।
তিনি প্রতি বছর মেধা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান লাভ করে ছাত্র-ছাত্রীদের সাদেক আলী ফাউন্ডেশনের বৃত্তি লাভের আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথি কামাল হোসেন সাদেক আলী ফাউন্ডেশনের ভূয়সী প্রশংসা করে সাদেক আলী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রবাসী সাংবাদিক আবুল কাশেমকে সাধুবাদ জানান। কারণ, আমাদের সমাজে প্রবাসের কষ্টার্জিত অর্থে মানব সেবা ও শিক্ষা বৃত্তি ফাউন্ডেশন পরিচালনা করার মতো মানুষের বড় অভাব।
তিনি বলেন, প্রবাসে এবং আমাদের সমাজে অনেক বিত্তবান মানুষ রয়েছে । কিন্তু, তাদের উদার মানসিকতা নেই। সাংবাদিক আবুল কাশেম তার নিজ এলাকার ছাত্রছাত্রীদের মাঝে মেধা বিকাশের প্রতিযোগিতা বাড়ানোর জন্য যে ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন তা নিঃসন্দেহ প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি তথ্য-প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থাপনার উপর পড়াশুনায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহী হওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির প্রধান ও ভীমগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুলাল উদ্দীন মোল্লা তার বক্তব্যে বলেন, সাদেক আলী ফাউন্ডেশন আমাদের স্কুলের অন্যতম সম্পদে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর সাদেক আলী ফাউন্ডেশনের বৃত্তি পাওয়ার জন্য ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে পড়াশোনার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। তার প্রমাণ মরিয়ম আক্তার ও ফাতেমা আক্তার।
তিনি আরও বলেন, প্রবাসী সাংবাদিক আবুল কাশেম যে উদ্দেশ্য নিয়ে সাদেক আলী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন তাতে তিনি শতভাগ সফল হয়েছেন। কারণ আমাদের স্কুলে এই ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে ছেলে-মেয়েদের মাঝে পড়াশোনার প্রতি পরস্পর প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ ধরনের মহতি কাজ করার জন্য সাংবাদিক আবুল কাশেমকে ধন্যবাদ জানাই।
সেই সঙ্গে তিনি এ ধরনের আরও শিক্ষা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজের বিত্তবানের প্রতি আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে সাদেক আলী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা হয়। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রথম স্থান অধিকারীকে এককালীন বৃত্তি প্রদান করে আসছে এই ফাউন্ডেশন। এবার ১৫ জন ছাত্র-ছাত্রীকে আট হাজার টাকা করে মেধা বৃত্তি প্রদান করা হয়।
বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে রয়েছে- মো. সোলাইমান, মরিয়ম আক্তার, লিজা আক্তার, ফাতেমা আক্তার, রিফাত মিয়া, সাদিয়া আক্তার, জেসমিন আক্তার ও জাহিদুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানের সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন শামীম হোসেন। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে মরহুম সাদেক আলী ও তার মরহুমা স্ত্রী বেগম চাঁনবানু’র আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং এসএসসি’র বিদায়ী পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত