পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ গ্রামের একটি ভুট্টা ক্ষেতে ভারতীয় দুই হাতি ঢুকে পড়েছে। বিকেলে হাতিকে দেখতে গিয়ে হাতির আক্রমণে এক প্রতিবন্ধী যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
স্থানীয়রা জানায়, দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে আহত নুরজামাল অন্যান্য দর্শনার্থীদের সাথে হাতি দুটিকে দেখতে গিয়েছিলেন। লোকজনের চিৎকারে হাতি দু'টি হঠাৎ দৌড়াতে থাকে। এসময় সবাই দৌড়ে পালাতে পারলেও মানসিক প্রতিবন্ধী নুরজামাল বেশি দৌড়াতে না পারায় হাতি সুর দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে। এলাকাবাসী আবার চিৎকার করলে হাতি দুটি চলে যায়। পরে স্থানীয়রা নুরজামালকে উদ্ধার করে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাকে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। অবস্থা আশংকাজনক দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছিল। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
কাশিমগঞ্জ গ্রামের জামাল উদ্দিন (৫০) জানান, আমাদের বাড়িতে ঢুকে পড়েছিল। যাবার সময় বাড়ির বেড়া, বাথরুমের ওয়াল ভেঙে দিয়েছে। মরিচ খেত ও ভূট্টা খেত নষ্ট করেছে। আমরা খুব আতঙ্কে ছিলাম। তারপরে আস্তে আস্তে পশ্চিম দিকের ভূট্টা ক্ষেতে চলে যায়। বর্তমানে মহানন্দা নদীর পাড়ে ভূট্টা ক্ষেতে অবস্থান করছে।
বিকেলে বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের কাশিমগঞ্জ বিজিবি ক্যাম্পের কাছে মহানন্দা নদীর ওপারে ভারতের ফাসিদেওয়া বিএসএফ ক্যাম্প এলাকার ৭৩০ নং পিলারের কাছে দু’দেশের সংশ্লিষ্টরা একটি সভা করেছেন। সভায় ভারত ও বাংলাদেশের প্রাণী ও বন বিভাগের কর্মকর্তা, কর্মচারি এবং বিজিবি বিএসএফ এর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয়রা বলছেন, আজ মঙ্গলবার ভোর বেলা রওশনপুর সীমান্ত দিয়ে এই দু’টি হাতি বাংলাদেশে প্রবেশ করে পাঁচ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ কাশিম গঞ্জ এলাকায় আসে। রাস্তায় একটি গরুকে আহত করে। বর্তমানে ভূট্টাক্ষেতের ভেতরে হাতি দুইটি অবস্থান করছে। হাতি দুটিকে দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো মানুষ ভিড় করছে । বনবিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে আছেন। তারা সকাল থেকে দর্শনার্থীদেরকে এলাকা ছেড়ে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। কোনোক্রমেই যাতে হাতি দু’টিকে উত্যক্ত না করা হয় হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে এমন আহ্বান জানাচ্ছেন তারা।
বনবিভাগ জানিয়েছে ইতোমধ্যে ভারতীয় বন ও বন্য প্রাণী বিভাগ তাদের সাথে যোগাযোগ করেছে। হাতি দুটিকে উদ্ধার করে ভারতে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তারা। বিকেলে দুই দেশের সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সভাও হয়েছে।
জেলা সহকারী বনসংরক্ষক নুরুন্নাহার জানান, আমাদের কর্মীরা স্থানীয়দের সচেতন করতে মাইকিং করছে। এই মুহূর্তে হাতি দুটিকে কোনোভাবেই উত্যক্ত করা যাবে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি জানান, স্থানীয় মানুষ যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় এ জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। হাতিদের কাছাকাছি বাড়ির লোকজনদের আপাতত সরে থাকতে বলা হয়েছে। পুলিশ, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নিরাপত্তার জন্য কাজ করছেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল