ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

অপহৃত পাঁচ কৃষককে উদ্ধারের দাবি পুলিশের, স্বজনরা বলছেন ভিন্ন কথা
টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
পাঁচ কৃষককে উদ্ধারের দাবি পুলিশের

অপহৃত স্থানীয় পাঁচ কৃষকের মধ্যে চারজনকে কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা গহীন পাহাড় থেকে উদ্ধারের দাবি করেছে পুলিশ। অপহৃতদের উদ্ধারের জানিয়েছেন টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গনি। 

আজ রবিবার ভোররাতে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পশ্চিম পানখালী এলাকার গহীন পাহাড় থেকে তাদের উদ্ধারের কথা জানায় পুলিশ। তবে ভুক্তভোগীর স্বজনরা বলছেন, জনপ্রতি ৩০ হাজার টাকা করে মোট ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি জানান, ঘটনার পরপরই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশের কয়েকটি টিম অভিযান শুরু করে। স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশকে অভিযানে সহযোগিতা করেন। আজ ভোররাতেই গহীন পাহাড় থেকে চারজনকে উদ্ধার করা হয়। এরপর তাদের হেফাজতে নেয় পুলিশ। অপর কৃষককে উদ্ধারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক অভিভাবক বলেন, ‌এক লাখ ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার পরে তাদের ছেড়ে দিয়েছে অপহরণকারী সন্ত্রাসীরা। তাদের মারধর করা হয়েছে। তারা ভালোভাবে হাঁটতেও পারছেন না।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ক্ষেত পাহারা দেওয়ার সময় পাঁচ কৃষককে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা। পরে মুক্তিপণ চেয়ে অপহৃত রফিকের ভাই মো শফিকের মোবাইল ফোনে ৩০ লাখ টাকা দাবি করেন। অবশেষে অপহরণকারীদের জিম্মিদশা থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ নিয়ে চারজনকে ফেরত দিলেও মো. নুর নামে আরেকজনকে ফেরত দেয়নি অপহরণকারীরা। তাকে ফেরত দিতে আরও ৫ লাখ টাকা দাবি করেছে তারা।

উদ্ধার কৃষকরা হলেন টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের পানখালী এলাকার ফকির মোহাম্মদের ছেলে মো. রফিক (২২) একই এলাকার শাহাজানের ছেলে জিহান (১৩), ছৈয়দ উল্লাহর ছেলে শাওন (১৫) ও নুরুল আমিনের ছেলে আব্দুর রহমান (১৫)। তবে আব্দুর রহিমের ছেলে মো. নুরকে (১৮) এখনো ফেরত দেয়নি অপহরণকারীরা। 

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, পুরো এলাকার মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত কয়েকটি গ্রামের পাহাড়ে সন্ত্রাসীরা আস্তানা গড়ে তুলেছে। স্থানীয় ব্যক্তিদের অপহরণ করে তারা মুক্তিপণ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। বিগত কয়েক মাসে টেকনাফে বারবার এমন ঘটনা ঘটছে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন। অপহৃত পাঁচ কৃষকের মধ্যে চারজন ছাড়া পেয়েছেন বলে এলাকাবাসীর মাধ্যমে জানতে পেরেছি।

এদিকে গেল ১০ মার্চ হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ২২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকা থেকে সাতজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অপহরণকারীরা নিয়ে যায়। একদিন পরে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তারা ফেরত আসেন।

এর একদিন আগে গত ৯ মার্চ হ্নীলার পূর্ব পানখালী এলাকা থেকে মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র সেয়াদ বিন আব্দুল্লাহকে (৬) অপহরণ করে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। সে শিশু সোয়াদকে এখনো উদ্ধার করা যায়নি।

উল্লেখ্য, গত ১২ মাসে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১০৭ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে ৫৭ জন স্থানীয় বাসিন্দা, বাকিরা রোহিঙ্গা নাগরিক। অপহরণের শিকার ব্যক্তিরা বেশির ভাগই মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে।

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ



এই পাতার আরো খবর