ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পারিবারিক বিরোধে প্রবাসীকে হত্যা, সাবেক চেয়ারম্যানসহ গ্রেফতার ৬
শেরপুর প্রতিনিধি

শেরপুরে আমেরিকা প্রবাসী আব্দুল হালিম জীবন (৪৮) হত্যা রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যান ও দুই নারীসহ মোট ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

গ্রেফতাররা হলো শেরপুর সদর উপজেলার চরপক্ষীমারি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ (৪৫ একই ইউনিয়নের ডাকপাড়া গ্রামের আবেদ আলীর ছেলে মোবারক মোস্তাক (৩২), মোঃ আফিল উদ্দিনের ছেলে মোঃ রকিব হোসেন জিহাদ (২০), হযরত আলীর ছেলে মোঃ কালু মিয়া (২৫) শহরের পূর্ব শেরী এলাকায় ভাড়ায় বসবাসকারী ফারুক আহাম্মেদের স্ত্রী রুপা বেগম (২৮), কান্দা শেরীচর এলাকার ফারুক হোসেনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৪০)। 

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে জিহাদ ও কালু হত্যার সময় আহত হয় এবং চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে পুলিশের দাবি। গতকাল রবিবার সকালে ওই প্রবাসীর লাশ চরাঞ্চলের চুনিয়ারচর থেকে পুলিশ উদ্ধার করে। 

আজ সোমবার দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সাংবাদিক সন্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোনালিসা বেগম। হত্যার মূল কারণ পারিবারিক বিরোধ। এখন পর্যন্ত ছয়জন গ্রেফতার হলেও অভিযুক্ত মোট নয়জন। তবে তদন্তে আরও অভিযুক্তের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে দাবি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খোরশেদ আলমের। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শেরপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খোরশেদ আলমের নেতৃত্বে জেলা গোয়েন্দা শাখা চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। গতকাল ৩১ মার্চ এ বিষয়ে শেরপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়।মামলার বাদী জীবনের দ্বিতীয় স্ত্রী আতিয়া আক্তার। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত  আজ বিকালে আসামিদের মধ্যে গ্রেফতারকৃত ওই দুই নারী আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানাা গেছে।   পুলিশ সুপার মোনালিসা বেগম জানিয়েছে হালিম জীবন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকার দ্বৈত নাগরিক। ২৫ বছর আমেরিকায় বসবাস করে দুই বছর আগে জীবন বাংলাদেশে আসেন। আমেরিকায় জীবনের বাংলাদেশি এক স্ত্রী আছে। তবে এই দম্পতি নিঃসন্তান। জীবন দেশে ফিরে সন্তানের আশায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তার ২য় বিয়ে এবং পারিবারিক নানা বৈষয়িক বিষয় নিয়ে পিতামাতার ও ভাইবোনদের  সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয় জীবনের। সেই বিরোধের জেরে জীবনের সাথে অন্তত ছয়টি মামলা হয়। একটি মামলায় জীবনের পিতা ছায়েদুর রহমান মাস্টার দেড় মাস কারাভোগের পর এক সপ্তাহ পূর্বে জামিনে আসেন। এই কারণে জীবনের পরিবারে লোকজন আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়। জীবনের আমেরিকান প্রবাসী ভাই (স্বপন অথবা সুমন) বাবার অপমান সইতে না পেরে ভাই জীবনকে শায়েস্তা করতে পরিকল্পনা আঁটে। ভাইকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জীবনের ভাই বাংলাদেশি এক বন্ধু শাহিনের সাথে যোগাযোগ করে। শাহীনের বাড়ী শেরপুর শহরের সজবরখিলা। শাহীনের ব্যবসায়ি পার্টনার হলো অভিযুক্ত সাবেক ওই চেয়ারম্যান রউফ। জীবনকে শায়েস্তা করার দায়িত্ব দেওয়া হয় আব্দুর রউফকে। এই কাজে আব্দুর রউফ তার সাঙ্গপাঙ্গ কালু, ময়নাল, জিহাদ, মোবারকদের নির্দেশ দেয়। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কালু তার পূর্ব পরিচিত মনোয়ারা বেগম ও রুপা বেগম নামে দুই নারীর সহযোগীতা নেয়। রুপা বেগম জীবনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। গত ৩০ মার্চ  বিকালে রুপা জীবনকে মোবাইলে ডেকে কৌশলে ওই হত্যাকারীদের হাতে তুলে দেয়। অভিযুক্তরা জীবনকে একটি ঘরে আটক করে সারা দিন নির্যাতন করে রাত নয়টা দিকে অপহরণের নাটক সাজাতে মোবাইল ফোনে স্ত্রীর নিকট মুক্তিপণ দাবি করে। রাতের যে কোনো এক সময় ঘটনাস্থলে নিয়ে জীবনকে হত্যা করা হয়।

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল



এই পাতার আরো খবর