ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বৈসাবি উৎসবে মাতোয়ারা পাহাড়
ফাতেমা জন্নাত মুমু, রাঙামাটি

বৈসাবির উৎসবে মাতোয়ারা পাহাড়। কারণ ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীদের কাছে বৈসাবি মানে উৎসব, আনন্দ আর উল্লাস। তাই গানে সুর, নূপুরের ছন্দে, নাচের তালে তালে মেতেছে তরুণ-তরুণীরা। সেজেছে নিজেরা হরেক রকম বাহারি পোশাকে। পাহাড়ি পল্লীগুলোতে এখন জমজমাট বৈসাবি উৎসবের আসর। একই সঙ্গে জমে উঠেছে বৈসাবি মেলাও। চৈত্র এলেই অর্ধমাসব্যাপী চলে বর্ষবরণের উৎসব। উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পাহাড়ি এ অঞ্চল। সম্প্রীতির মিলনমেলায় মিশে যায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালিরা। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের খেলাধুলা ও বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মেলার মধ্যদিয়ে গত ৩ এপ্রিল শুরু হয়েছে বৈসাবির নানা উৎসব। আর এ আনন্দ উৎসব চলবে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত। এ সময়টায় ভ্রমণপিপাসু পর্যটকের ভিড় বেশি জমে পার্বত্যাঞ্চলে।

বৈসাবি : চৈত্র মাসের শুরুতেই একটি পাখি এসে বিজু বলে ডাক দিয়ে যায়। চাকমা সম্প্রদায় এ পাখিকে বিজু পেক্কো (বিজু পাখি) বলে। এই পাখির সুমধুর কলতান বিজু বা চৈত্রসংক্রান্তি উৎসবের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে। এটা পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ধারণা। পার্বত্যাঞ্চলের ১০ ভাষাভাষী ১২টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বৈসাবিকে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে পালন করে থাকে। যেমন- চাকমারা বিজু, মারমারা সাংগ্রাইং, ত্রিপুরারা বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু ও অহমিয়ারা বিহু নামে পালন করে থাকে। তবে সবকিছুর সংমিশ্রণের এ উৎসব পরিচিতি লাভ করেছে ‘বৈসাবি’ নামে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে চাকমা রীতি অনুযায়ী ১২ এপ্রিল অর্থাৎ চৈত্র মাসের ২৯ তারিখ গঙ্গ্যা দেবীর উদ্দেশ্যে কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসিয়ে সূচনা করা হয় ‘ফুল বিজুর’ উৎসব। পরদিন (১৩ এপ্রিল) মূল বিজু মানেই পাজন খাওয়া উৎসব। আর (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ। চাকমা ভাষায় গজ্যাপজ্যা। সেদিনও চলে নানা আয়োজন।  এ ছাড়া (১৫-১৬ এপ্রিল) মারমা সম্প্রদায়ের জলোৎসবের নতুন বছরকে বরণ ও পুরনো বছরকে বিদায় জানানোর মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাহাড়ে বৈসাবির আনুষ্ঠানিকতা।

বিজু : পার্বত্যাঞ্চলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে চাকমা সম্প্রদায় বৈসাবিকে বিজু বলে। তারা এ উৎসব তিন ভাগে ভাগ করে পালন করে। যেমন- বছরের শেষ অর্থাৎ চৈত্র মাসের ২৯ তারিখে ‘ফুল বিজু’, ৩০ তারিখে ‘মূল বিজু’ বৈশাখ মাসের ১ তারিখ ‘গজ্যাপজ্যা বিজু’ নামে পালন করে।

সাংগ্রাই : সাংগ্রাই মানে জলোৎসব। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মধ্যে মারমা সম্প্রদায় বছরের শেষ দিনে সাংগ্রাই উৎসবের মধ্য দিয়ে পালন করে। মূলত নতুন বছরকে বরণ আর পুরো বছরকে বিদায় করতে তারা এ সাংগ্রাইয়ের আয়োজন করে থাকে। এ দিন জলোৎসবের দৃশ্য বেশ উপভোগ্য বলে প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটে। মারমা ভাষায় জলোৎসবকে ‘রিলংপোয়ে’ বলে। মারমা ও রাখাইন তরুণ-তরুণীরা জলখেলার জন্য আগে থেকে প্যান্ডেল তৈরি করে রাখে। মারমা যুবক-যুবতীরা জল ছিটিয়ে একে অপরকে কাবু করার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে। এ উৎসবে শুধু মারমা কিংবা রাখাইন সম্প্রদায় নয়, যোগ দেয় বিভিন্ন জাগিগোষ্ঠীর বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ। জলোৎসবের পাশাপাশি চলে দড়ি টানাটানি, হাডুডু খেলার প্রতিযোগিতা।

বাঙালির বর্ষবরণ : বৈসাবির সর্বশেষ উৎসব হচ্ছে বর্ষবরণ। ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ। সকাল থেকে শুরু হয় নানা উৎসব। রঙে-ঢঙে সেজে নারী-পুরুষেরা অংশ নেয় বর্ষবরণ উৎসবে। সেদিন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী আর বাঙালির মধ্যে থাকে না কোনো প্রকার ভেদাভেদ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলনমেলায় বসে আসর। এ উৎসবে মেতে ওঠে বাঙালি, হিন্দু ও বড়ুয়া সম্প্রদায়ের মানুষও। একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরও সুদৃঢ় হয়। কেউ কারও প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করে না।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন



এই পাতার আরো খবর