তাপপ্রবাহের সর্বোচ্চ মাত্রা অতি তীব্র তাপপ্রবাহে প্রবেশ করেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। চুয়াডাঙ্গা শনিবার ৪২.৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আর কুষ্টিয়ায় পাওয়া গেছে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১.২ ডিগ্রি। ভূগোলবিদ ও আবহাওয়া কর্মকর্তারা বলছেন, কর্কটক্রান্তি রেখা বরাবর হওয়ায় এ এলাকায় গরম বেশি থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও সমুদ্রের গরম পানি প্রবাহের কারণে এবার গরম বেশি পড়বে।
তীব্র এ গরমে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে জনজীবন। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। রিক্সা চালকদের কিছুক্ষণ কাজ করেই গাছের ছায়ায় বিশ্রাম করতে হচ্ছে। তাছাড়া ফুটপাতের খোলা দোকানিদেরও দোকান রেখে দূরে ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
অন্য বছরের মতো এবছরও সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা উঠছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গায়। শনিবার বেলা ৩টায় ৪২.৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে সেখানকার আবহাওয়া অফিস। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক তহমিনা নাছরিন বলেন, এরমধ্য দিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা অতি তীব্র তাপপ্রবাহের আওতায় চলে গেলো। বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিসের হিসেব মতে ৩৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায় মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ ডিগ্রিতে মাঝারি, ৪০ ডিগ্রিতে তীব্র তাপপ্রবাহ আর ৪২ ডিগ্রিতে উঠলে হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
চুয়াডাঙ্গার পাশের জেলা কুষ্টিয়ায় তীব্র তাপ প্রবাহ রয়েছে। কুষ্টিয়ার কুমারখালী কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার থেকে শনিবার ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এই কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন আর রশিদ বলেন, এটি কুষ্টিয়ার এ যাবৎকালের রেকর্ড।
আবহাওয়াবিদ মামুন আর রশিদ বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমের এই অঞ্চল কর্কটক্রান্তি রেখা বরাবর। এ কারণে প্রতিবছর গরমের সময় তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়। তবে এবার তাপমাত্রা অনেক বেশি উঠেছে। তিনি বলেন, আগেই আশঙ্কা করা হয়েছিল ২০২৪ সালে উষ্ণতা বাড়বে। বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন বঙ্গোপসাগরে উষ্ণ সামুদ্রিক পানির স্রোতের কারণে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে এবার গরম হাওয়া বয়ে যাবে।
কর্কটক্রান্তি কি? পৃথিবীকে ভৌগলিকভাবে ভাগ করতে কিছু রেখা কল্পনা করা হয়। তেমনি একটি রেখা কর্কটক্রান্তি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভূগোলবিদ অধ্যাপক ডক্টর এ কিউ এম মাহবুব বলেন, বিষুব রেখাকে শূন্য ডিগ্রি ধরা হয়। এই রেখা বরাবর অঞ্চল সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত।
এই রেখা থেকে প্রায় সাড়ে ২৩ ডিগ্রি উত্তরে যে রেখাটি কল্পনা করা হয় তা হল কর্কটক্রান্তি। বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো কর্কটক্রান্তি রেখা বরাবর পড়েছে। এই ভূগোলবিদ আরো বলেন, বছরে দুইবার কর্কটক্রান্তি রেখা বরাবর সূর্য লম্বালম্বিভাবে কিরণ দেয়। বিষুব রেখা থেকে সূর্য একবার সাড়ে ২৩ ডিগ্রি পর্যন্ত উত্তরে আর একবার দক্ষিণে সাড়ে ২৩ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠানামা করে। এই ৪৭ ডিগ্রি অঞ্চলকে গ্রীষ্মমণ্ডল বা উষ্ণমণ্ডল বলা হয়। কর্কটক্রান্তি রেখা যেহেতু শূন্য রেখা থেকে উত্তরে তাই গরমের সময় এর দক্ষিণ বরাবর তাপ বেশি থাকে। বাংলাদেশে কর্কটক্রান্তি রেখার দক্ষিণ দিকে পড়েছে দক্ষিণাঞ্চল। এ কারণে চুয়াডাঙ্গা, যশোর, কুষ্টিয়া, পাবনা অঞ্চলে এ সময় তাপমাত্রা বেশি থাকে।
অধ্যাপক একিউএম মাহবুব দক্ষিণাঞ্চলে এই সময় গরমের আরও একটি কারণ উল্লেখ করেছেন। বলেছেন সাধারণত সাগরের পানি তাপমাত্রা ধরে রাখতে পারে। দক্ষিণাঞ্চলে বঙ্গোপসাগর থাকায় এখানকার তাপমাত্রা এই অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করছে। একদিকে কর্কটক্রান্তির দক্ষিণ বরাবর সূর্যের তাপ বেশি অন্যদিকে বায়ুমণ্ডলের উত্তপ্ততা দুটি মিলিয়ে এ অঞ্চলে তীব্র তাপ প্রবাহ হচ্ছে।
অধ্যাপক একিউএম মাহবুব বলেন, সমুদ্রের উপরিভাগের পানির তাপমাত্রার পর্যাবৃত্তের উষ্ণ পর্যায় হলো এল নিনো। যেটি কারণে এবার বিষুবরেখার দক্ষিণ বরাবর বেড়েছে। এ কারণে এ অঞ্চলের তাপমাত্রা বাড়ছে। আর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়ে যে গড় তাপমাত্রা বাড়ছে তারও প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশে তাপমাত্রা বাড়ার ক্ষেত্রে তিনি বায়ু দূষণকেও দায়ী করছেন। বলেন বায়ু দূষণে চ্যাম্পিয়ান হয়ে আমরা নিজেরাও তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছি।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল