শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে দেরি করায় জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত এক চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় হাসপাতালে সকল কার্যক্রম এক ঘণ্টা বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন করেন চিকিৎসকরা।
শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরে হাসপাতাল চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত ছিলেন ডাক্তার সাদিয়া লিমিয়া। পাশে বসে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রস্তুত করছিলেন ডাক্তার শেহেরিয়ার ইয়াসিন। এ সময় স্কুলের মারামারিতে আহত অবস্থায় অভি পাহাড় (১৫) নামে এক কিশোরকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন শরীয়তপুর শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি এলিম পাহাড়।
পরে তার ছেলেকে চিকিৎসা দিতে দেরি হওয়ায় ডাক্তারের উপর চড়াও হন ওই শ্রমিক নেতা। একপর্যায়ে ডাক্তার শেহেরিয়ার ইয়াসিনকে চড়-থাপ্পর মেরে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন তিনি। এ ঘটনার পরে চিকিৎসকদের এক ঘণ্টা চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন রোগীরা। এ নিয়ে অভিযুক্ত ওই শ্রমিক নেতার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পালং মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
অভিযুক্ত শরীয়তপুর শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি এলিম পাহাড় বলেন, হাসপাতালে আমার ছেলেকে নিয়ে আসার পর ২ ঘণ্টার মধ্যে কোনো ডাক্তার এসে আমার ছেলেকে দেখলো না। শুধু বলেন আমার সময় হলে দেখবো। আমার ছেলে রক্তাক্ত অবস্থা পরে আছে।
এ বিষয়ে ডাক্তার শেহরিয়ার ইয়াছিন বলেন, আমি জরুরি বিভাগে বসে প্রশাসনিক কাজ করছিলাম। তখন জরুরি বিভাগে ডিউটিতে ছিলেন ডাক্তার লিমিয়া সাদিয়া। এলিম পাহাড় যখন তার ছেলেকে নিয়ে আসেন তখন ডাক্তার লিমিয়া অন্য আরেকটি রোগী দেখছিলেন। এক সময় ডাক্তার লিমিয়ার উপরে চড়াও হন তিনি। আমি তাকে বললাম একটু অপেক্ষা করে রোগী দেখবেন। তখন সে বলেন, তুই আসলি না কেন? বলেই চর-থাপ্পড় মারতে শুরু করেন আমাকে।
জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক লিমিয়া সাদিয়া বলেন, আমি রোগীটাকে দেখে হ্যান্ড গ্লাভস পরে আসতে যতটুকু সময় লাগে ওই টুকুই দেরি হয়েছিল। এতেই ওই শ্রমিক নেতা ডাক্তার শেহেরিয়ার ইয়াছিনের উপরে ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন। আমি তাকে থামাতে গেলে সে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে গায় হাত তুলেন।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবিবুর রহমান বলেন, একটি রোগী আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হাসপাতালে আসেন। এসময়ে জরুরি বিভাগে ডিউটিতে ছিলেন ডাক্তার লিমিয়া। তিনি রোগীদের বলেন আমি হ্যান্ড গ্লাভস নিয়ে আসতেছি। পাশেই বসে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রস্তুত করছিলেন ডাক্তার শেহেরিয়ার ইয়াছিন। রোগীর লোক এসে ওই ডাক্তারকে বলতেছে, তুই কী করছ, তুইতো আমার রোগীকে দেখতে পারতি। বলেই তার গায় হাত তোলেন। আমি চিৎকার শুনে জরুরি বিভাগে গেলে আমার সাথেও তিনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। আমি দেখছি তার রোগী পুরোপুরি সুস্থ। হয়তো একটা জায়গা থেকে মাথা ফেটে গেছে। মাথা থেকে রক্ত পরাও বন্ধ হয়ে গেছে। আমি প্রশাসনের কাছে এটার সুষ্ঠু বিচার দাবি করি।
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, এ ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আমরা মামলা নেব। মামলা কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই