ঢাকা, বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সাতক্ষীরা সুন্দরবন রেঞ্জ
বাঘের পর এবার কুমিরের মুখ থেকে বেঁচে ফিরলেন মৌয়াল
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

গভীর সুন্দরবনে ঢুকে মধু কাটার পর নদীতে গোসল করতে নামেন আবদুল কুদ্দুসসহ ছয় মৌয়াল। হাঁটু থেকে সামান্য উঁচু পানিতে গোসল করছিলেন। হঠাৎ আবদুল কুদ্দুসকে পানির মধ্যে ঘুরপাক খেতে দেখেন অন্যরা। ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই হতবাক। আবদুল কুদ্দুস পানিতে ঘুরপাক খাচ্ছেন আর পানিতে ভেসে উঠছে রক্ত। হঠাৎ পানির ওপরে উঠে এলো কুমিরের লেজ। 

বাকিদের বুঝতে আর কিছু বাকি রইল না। আবদুল কুদ্দুসকে কুমিরে ধরেছে। সঙ্গে সঙ্গে হাতে থাকা মগ ও পাতিল নিয়ে সজোরে পানিতে আঘাত করতে লাগলেন বাকি পাঁচজন। তারা আবদুল কুদ্দুসের দুই পা ধরে টানাটানি শুরু করেন। এভাবে চলতে থাকল তিন থেকে চার মিনিট। হঠাৎ শিকার ছেড়ে নদীর গভীরে চলে যায় কুমিরটি। এর আগে, ২০১৫ সালে মধু কাটতে গিয়ে সুন্দরবনের তালপট্টি এলাকায় বাঘের কবলে পড়েন আবদুল কুদ্দুসসহ ৭ জনের একটি দল।

আবদুল কুদ্দুসকে (৫৫) কুমিরের হাত থেকে জীবিত উদ্ধারের এ ঘটনায় নেতৃত্ব দেন তারই ছোট ভাই আবদুল হালিম। ঘটনাটি ঘটে গত ১১ মে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের কলাগাছিয়া নদীতে। গত সোমবার লোকালয়ে ফেরার পর মঙ্গলবার (১৪ মে) তাকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আহত আবদুল কুদ্দুস জেলার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের মৃত মোকছেদ সানার ছেলে। 

মৌয়ালদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৭-৮ দিন আগে বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন থেকে মধু সংগ্রহের পাস (অনুমতিপত্র) নিয়ে সুন্দরবনে ঢোকেন ছয় মৌয়াল। তাদের দলে ছিলেন দুই ভাই আবদুল কুদ্দুস ও আবদুল হালিম। ঘটনার দিন অল্প সময়ের ব্যবধানে দুইটি চাক পাওয়ায় সবাই খোশমেজাজে ছিলেন। এক পর্যায়ে দুপুর আড়াইটার দিকে কলাগাছিয়া নদীর চরে হাঁটুপানিতে নেমে গোসল করার সময় এ ঘটনা ঘটে।

আবদুল কুদ্দুস ও আবদুল হালিম গত ৩৫-৩৬ বছর ধরে মাছ, কাঁকড়া শিকারসহ মধু সংগ্রহে সুন্দরবনে যাতায়াত করেন। এর আগে, ২০১৫ সালে মধু কাটতে গিয়ে সুন্দরবনের তালপট্টি এলাকায় বাঘের কবলে পড়েন তারা। তখন দলে ছিলেন সাতজন। লাফ দিয়ে আসার মুহূর্তে বাঘ দেখতে পেয়ে সহযোগী আবদুল আজিজ সরে গিয়ে বেঁচে যান। পরে তারা সমবেত হয়ে চিৎকার এবং লাঠিসোটা দিয়ে গাছে আঘাত করে এলাকা ছেড়ে নিজেদের রক্ষা করেন। ২০০৮ সালে মধু কাটতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে নিহত হন আবদুল কুদ্দুসের খালু দাতিনাখালী গ্রামের গোলাম মোস্তফা।

এ বিষয়ে সুন্দরবনের সহকারী বন সংরক্ষক এ কে এম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, গত পাঁচ বছরে সুন্দরবনে গিয়ে বাঘের আক্রমণে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে কুমির ও বাঘের আক্রমণে আহত হন দুইজন। সুন্দরবনে গিয়ে বাঘ, কুমিরসহ হিংস্র প্রাণী থেকে নিরাপদে থাকার বিষয়ে যাত্রা শুরুর প্রাক্কালে মৌয়ালদের সতর্ক করা হয়।

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ



এই পাতার আরো খবর