ঢাকা, সোমবার, ২২ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

ঘূর্ণিঝড় রিমালে তছনছ উপকূল, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
অনলাইন ডেস্ক

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সারা দেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ ছিল বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায়। সেই সঙ্গে বেড়িবাঁধ ও সেতুতে ধস, বাড়িঘর ধসে পড়া, সড়কে জলাবদ্ধতা, গাছ উপড়ে পড়া ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়ার কারণে বেড়েছে মানুষের ভোগান্তি।

সুন্দরবনের পানি প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পর নামতে শুরু করায় মৃত প্রাণীর দেহ ভেসে উঠছে। বন বিভাগে দায়িত্ব পালনকারী একাধিক কর্মকর্তা জানান, দুর্গম এই বনের কোথায়, কোন খালে, কোন অংশে কোন প্রাণী মরে পড়ে আছে অথবা ভেসে চলে গেছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান কোনো দিন পাওয়া যাবে না।

গতকাল সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের কটকা জামতলা এলাকা থেকে ২৬টি মৃত হরিণ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। পানিতে ভেসে যাওয়ার সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে জীবিত অবস্থায় ১৭টি হরিণ উদ্ধার করা হয়। বনের মধ্যে ৮০টি পুকুরে লবণ পানি প্রবেশ করে মিষ্টি পানির উৎস নষ্ট হয়ে গেছে।

সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ কে এম ইকবাল হোসেন চৌধুরী জানান, সুন্দরবনের প্রাণিজগৎসহ বনজীবীদের মিষ্টি পানির চাহিদা মেটানোর জন্য খনন করা ১৬টি পুকুরই লোনা পানিতে একাকার হয়ে গেছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে আটটি জেটি।

বরগুনায় ঘরের ওপর ভেঙে পড়া গাছ অপসারণের সময় ডাল ভেঙে পড়ে আব্দুর রহমান বয়াতি (৫৫) নামের এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। বরগুনার বামনা উপজেলায় বিষখালী নদীর জোয়ারের তোড়ে সব বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে উপজেলার চেঁচান, পুরাতন বামনা, খোলপটুয়া, দক্ষিণ রামনা, চলাভাঙ্গা এলাকার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে।

উপজেলার প্রায় ৫০০ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বান্দরবান-রুমা-থানচি সড়কের একটি বেইলি ব্রিজ প্রায় দেড় ফুট দেবে যাওয়ায় গতকাল জেলা সদরের সঙ্গে রুমা ও থানচি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়ে পাঁচটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ দুই দিন ধরে অন্ধকারে ছিল। গতকাল দুপুরের দিকে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হলেও তা দীর্ঘ সময় স্থায়ী হচ্ছে না।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় ৭৬০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৪০টি ঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। অরকাপল্লীর জেলেদের ঘরগুলোও কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ে গাছ ও ঘরচাপা পড়ে ভোলায় নারী, শিশুসহ পাঁচজন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া জোয়ারে ভেসে যাওয়া ঘেরের মাছ দেখতে গিয়ে বিষাক্ত সাপের কামড়ে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এস এম দেলোয়ার হোসেন জানান, তাঁদের কাছে গতকাল বিকেল পর্যন্ত মোট তিনজনের মৃত্যুর খবর রয়েছে।

জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভোলার সাত উপজেলায় দুই হাজার ৪৬৫টি ঘরবাড়ি পুরোপুরি এবং পাঁচ হাজার ১৫৮টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ভোলায় প্লাবিত হয়েছে দুই শতাধিক গ্রাম। গতকাল সকালে শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হলেও গ্রাম এখনো অন্ধকার। দুর্ভোগে রয়েছে ২০ লক্ষাধিক মানুষ।

ঝালকাঠির চার উপজেলায় কয়েক হাজার গাছপালা ও দুই শতাধিক বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। বসতঘরে গাছ উপড়ে পড়ে নলছিটি শহরের বাইপাস এলাকায় দুজন আহত হয়েছে।

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আল হেলাল জানান, ৪৮টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৭২টি গভীর নলকূপ, ৩০৪টি পাকা টয়লেট, ৮৮৫ হেক্টর কৃষিজমি ও ৩০০ মাছ ধরার ট্রলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি গলাচিপা জোনাল অফিসের ডিজিএম প্রকৌশলী মাইনউদ্দীন আহমেদ বলেন, অন্তত ৫২টি বিদ্যুতের খুঁটি সম্পূর্ণ ভেঙে তার ছিঁড়ে গেছে ১০০ কিলোমিটার। প্রায় দেড় হাজার মিটার ও ২৫টি ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

চাঁদপুরের মতলব উত্তরের মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের মূল বেড়িবাঁধের অন্তত ১০০ ফুট জায়গা ধসে গেছে। গত সোমবার রাতে মোহনপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পানির তোড়ে ভেসে গেছে পাকা সড়ক। এতে ধরখার-আখাউড়া-স্থলবন্দর সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

খাগড়াছড়িতে সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সড়কে ভেঙে পড়া গাছ কাটার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রাসেল (২১) নামের এক ফায়ার সার্ভিস কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তত তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সড়কের ওপর গাছ ও মাটি ধসে পড়ে বিচ্ছিন্ন রয়েছে সড়ক যোগাযোগ।

গাছপালা উপড়ে পড়ায় ফরিদপুরের গ্রামাঞ্চলে তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। সদরপুর উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নে পাঁচ-ছয়টি ঘর ও চর ভদ্রাসনের ঝাউকান্দা এলাকায় দুটি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ৪০০ ঘর প্লাবিত এবং সহস্রাধিক মাছের ঘের ভেসে গেছে। টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া নিম্নাঞ্চল হওয়ায় এই দুই উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি।

লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জানায়, বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৩৫টি খুঁটি ভেঙে গেছে এবং শতাধিক খুঁটি হেলে পড়েছে।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন



এই পাতার আরো খবর