ঢাকা, সোমবার, ২২ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সাতক্ষীরায় ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে সাতক্ষীরার উপকূলীয় জনপদে ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা ১ ও ২-এর অধীনে ২০টি পয়েন্টে এসব বাঁধ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে শ্যামনগর উপজেলার কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদী বেষ্টিত সুন্দরবন সংলগ্ন বদ্বীপ অঞ্চল গাবুরা ইউনিয়নের সাড়ে ২৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও নতুন করে ফাটল দেখা দেওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে এখানকার বসবাসরত ৪৩ হাজার মানুষ।

এ ছাড়া আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, বিছট, অনুলিয়া ও খাজরা ইউনিয়নের পানি উন্নয়ন বোর্ড ২-এর ৭/২ নম্বর পোল্ডারের আওতায় পশ্চিম খাজরা রাজবংশী পাড়া এলাকার কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী জরাজীর্ণ বাঁধ নতুন করে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া কালিগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত নদী ইছামতির খানজিয়া, দেবহাটা উপজেলার টাউনশ্রীপুর ও ভাতশালা এলাকায় ব্যাপক ফাটল ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে নদীর প্রবল জোয়ারে ভাঙনের ভয়ে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে এসব অঞ্চলের মানুষ।

তবে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে ও সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ২৬ জুন ঘূর্ণিঝড় রিমাল ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার গতিবেগে উপকূলে আঘাত আনে। এর স্থায়িত্ব ছিল অন্তত ৩০ থেকে প্রায় ৪০ ঘণ্টা। এ সময়ের মধ্যে তিন থেকে চারটি জোয়ার ভাটায় সুন্দরবন সংলগ্ন কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া ও চুনাসহ সকল নদ-নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৬ থেকে ৭ ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পায়। ঝড়ো বাতাস ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধে বার বার জোয়ারের পানি আছড়ে পড়তে থাকে। ফলে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১ ও ২-এর আওতাধীন মোট ৬৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ১৫ কিলোমিটার চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

স্থানভেদে ২০টি ফাটল ও ভাঙন কবলিত পয়েন্টের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় গাবুরা ইউনিয়নের লেবুবুনিয়া, পাশ্বেমারি, হরিষখালী, গাবুরা বাদার ও ৯ নম্বর সুরা অঞ্চল। যেখানে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নম্বর-১৫ পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ২৯ কিলোমিটার গাবুরা ইউনিয়নের টেকসই বাঁধ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। গত ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু হয়। ২০২৫ সালের ২৫ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মাসুদ হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের পানি যেভাবে বেড়িবাঁধে আছড়ে পড়েছিল। তাতে বাঁধ ভেঙে এই নদী বেষ্টিত বদ্বীপ অঞ্চল গাবুরা ইউনিয়ন সম্পূর্ণ রুপে পানিতে প্লাবিত হতো। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যেই পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং এলাকাবাসীর সমন্বয়ে দলগত প্রচেষ্টায় অরক্ষিত বাঁধ ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পায়। ঝুঁকিপূর্ণ ফাটল ও ভাঙন কবলিত এলাকায় জিওব্যাগ ফেলে ও গাছের ডাল পুঁতে বাঁধ রক্ষা করা হয়। তবে সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নম্বর-১৫ পুনর্বাসন প্রকল্পের গাবুরা ইউনিয়নে টেকসই বাঁধ নির্মাণের কাজ গত দেড় বছরে মাত্র ২২ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সাড়ে ২৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে মাত্র আড়াই কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজের কিছুই এখনো সম্পন্ন হয়নি।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন জানান, পাওবো ১ ও ২-এর আওতায় ৬৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ২০টি পয়েন্টে মোট ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব এলাকায় জিওব্যাগ ও অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বাঁধ সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে। ঝড়ের মধ্যে সার্বক্ষণিক এলাকাবাসীকে নিয়ে বাঁধ মেরামত করা হয়েছে গাবুরাসহ অন্যান্য স্থানে। ফলে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে সাতক্ষীরা উপকূলের মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত ও ফাটল কবলিত এলাকা চিহ্নিত করে, তা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর