ঢাকা, রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নামে অন্য জেলার আম বিক্রি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

জেলার আম পরিপক্ক হতে আরও কয়েকদিন সময় অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু খোদ চাঁপাইনবাবগঞ্জেই অন্য জেলার আম বিক্রি হচ্ছে ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম’ নামে। জেলার বেশ কয়েকটি বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন এসব আম। এতে একদিকে যেমন ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছেন, তেমনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমেরও সুনাম নষ্ট হচ্ছে।

সোমবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুরাতন বাজার, নিউ মার্কেট, রহনপুর বাজার ও শিবগঞ্জ বাজারে বিভিন্ন জাতের আম বিক্রি হতে দেখা গেছে। ভোক্তাদের কাছে এসব আমকে চাঁপাইনবাবগঞ্জেই উৎপাদিত বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

যদিও কৃষি বিভাগ বলছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাজারে আসতে আরও তিন-চারদিন সময় লাগবে। তাহলে বাজারে বিক্রি হওয়া আম আসছে কোথা থেকে?

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে একাধিক ব্যবসায়ী জানান, এখন বাজারে যেসব আম পাওয়া যাচ্ছে, তার বেশিরভাগই আসছে রাজশাহী ও নওগাঁ থেকে। সাতক্ষীরা থেকেও কিছু পরিমাণ আম আসছে বলে জানান তারা।

শহরের শিবতলা এলাকার বাসিন্দা কুতুব আলী জানান, চারদিন আগেও পুরাতন বাজার থেকে আম কেনেন তিনি। কিন্তু আম মিষ্টি ছিল না বরং টক টক ভাব ছিল। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের মতো স্বাদও নেই। কিন্তু তার কাছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বলে বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

আসাদুল ইসলাম নামে এক ব্যাংক কর্মকতাও আম কিনে প্রতারিত হয়েছেন। গোপালভোগ বলে তার কাছে প্রচলিত গুটি জাতের আম বিক্রি করেছেন বিক্রেতা। তবে ওই আম খেতে না পেরে শেষ পর্যন্ত আমসত্ত বানিয়েছেন তিনি।

আসাদুল ইসলাম বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের সুনাম রয়েছে। আর বিক্রেতা বারবার সেগুলোকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বলছিলেন। তাই সরল বিশ্বাসে আম কিনে ঠকেছেন তিনি। এতে করে তার স্ত্রী-সন্তানদের মনেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম নিয়ে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে।

এদিকে আম ব্যবসায়ীরা জানান, প্রায় এক সপ্তাহ থেকে জেলা শহরের পুরাতন বাজারে আম বিক্রি হচ্ছে। রহনপুরেরও বিভিন্ন এলাকায় আম বিক্রি হচ্ছে ৫-৬ দিন আগ থেকে। আর বাজারে ওঠা সব আমই বাইরে থেকে আসা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুরাতন বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, বর্তমানে নওগাঁর সাপাহার ও পোরশা থেকে আম আসছে বেশি। বিকালে আম নামিয়ে সেগুলো ব্যাটারিচালিত ভ্যানে পাঠিয়ে দেওয়া হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজারে। আবার কখনো কখনো খুব ভোরে আম নামিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বিক্রির জন্য। পোরশা ও সাপাহারের চেয়ে দাম বেশি পাওয়ায় বাগান মালিকরা চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম বিক্রি করতে পাঠান।

তিনি আরও বলেন, কেউ কেউ সত্য বলেই অর্থাৎ পোরশা-সাপাহারের আম বলেই বিক্রি করছেন। আবার কেউ ওই আমই চাঁপাইনবাবগঞ্জের বলে বিক্রি করছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাজারে আসতে আরও ৩/৪ দিন সময় লাগবে। কারণ গতকালই একজন কয়েকটি গোপালভোগ আম দিয়েছিলেন। সেগুলো খাওয়ার পর মনে হয়েছে আম পুরোপুরি পাকতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।

তিনি বলেন, আমের গায়ে তো আর লেখা নেই যে এটা চাঁপাইনবাবগঞ্জের। তাই বাইরের আমও এ জেলায় বিক্রি হতে পারে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে গোপালভোগ ও গুটি জাতের আমের পরিমাণ কম হওয়ায় ক্ষিরসাপাত আমের সময় বাজার জমে উঠবে বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মোকাব্বের আলম নাঈম বলেন, তিনি জেলায় নতুন যোগদান করেছেন। তাই এখন ঠিকঠাক বাজার মনিটরিং করতে পারছেন না। তবে অন্য জেলার আম চাঁপাইনবাবগঞ্জের নামে বিক্রি করা প্রতারণার সামিল। এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর