ঢাকা, সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

গ্রেফতার আতঙ্কে পুরুষ শূন্য কয়েকটি গ্রাম
গাইবান্ধা প্রতিনিধি

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে একটি কোরবানির পশুর হাটকে ভেঙে দেওয়াকে কেন্দ্র করে পুলিশ-এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনার ঘটনা ঘটেছে। হাটে পশু কেনা-বেচা করতে আসা হাঁটুরে ও ব্যবসায়ীদের ছত্রভঙ্গ করতে এ সময় পুলিশ তিন রাউন্ড রাবার বুলেট ছোঁড়ে। পরে তিনজনকে গ্রেফতারসহ মামলা করে পুলিশ। এতে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে আশেপাশের কয়েকটি গ্রাম।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শান্তিরাম এলাকার রুহুল আমিনের ছেলে রুবেল মিয়া (২৯), সতিরজান এলাকার লাল মিয়ার ছেলে মজিবুর রহমান (৫১) উত্তর ধর্মপুর এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মামুন অর রশিদ (২৯)।

বুধবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার শান্তিরাম ইউনিয়নের মজুমদারহাটে এই ঘটনা ঘটে। এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজনের প্রতিরোধের মুখে পুলিশ মোটর বাইক ফেলে সটকে পড়েন। পরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও গাইবান্ধার সহকারী পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অন্যান্য বছরের মতো চলতি বছরও মজুমদারহাটটি এক বছরের জন্য ইজারায় ডেকে নেন ইজারাদাররা। সম্প্রতি সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদের জানানো হয় ওই হাটে পশুরহাট বসানোর কোনও অনুমতি নেই। তারা পশুরহাট বসানোর জন্য আবেদন করেও কোনও ফল না পেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন। গত ১১ জুন হাইকোর্টের আইনজীবী নূরনবী একটি উকিল নোটিশ প্রদান করেন। এ প্রেক্ষিতে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন তাদের মৌখিভাবে পশুরহাট চালানোর নির্দেশ দেন। 

তারা আরও অভিযোগ করেন, সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশ তাদের কাছে এক লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করে। বারবার থানায় তলব করার পর ইজারাদার কমিটি থানায় গিয়ে কিছু টাকা দেওয়ার জন্য রাজি হলেও পুলিশ ৫০ হাজার টাকার নিচে নামবে না বলে জানিয়ে দেয়। এ নিয়ে বারবার দেন দরবার এবং দর কষাকষির এক পর্যায়ে গত বুধবার বিকালে হাটে পশু কেনাবেচা শুরু হলে আকস্মিকভাবে দুই মোটরসাকেলে তিনজন পুলিশ এসে হাটের বেচাকেনা বন্ধ করতে বলে। এ সময় তারা বিনা উস্কানিতে হাটে আসা ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের ছত্রভঙ্গ করতে তিন রাউন্ড রাবার বুলেট ছোঁড়ে। এতে লোকজন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে হাটের মধ্যে ছোটাছুটি শুরু করলে বেশ কয়েকটি গরু-ছাগল হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগও আছে। এ ঘটনায় ধাক্কাধাক্কিতে বেশ কয়েকজন আহত হন। হারিয়ে যায় অনেক মালামাল। এক পর্যায়ে লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে পুলিশ সদস্যরা সটকে পড়েন। পরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও গাইবান্ধার সহকারী পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন।

ঘটনার পর রাতে কয়েকটি বাড়ি থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় গ্রেফতার আতঙ্কে বর্তমানে কয়েকটি গ্রাম পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। ঈদুল আজহার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন না গ্রামবাসী।

এ ব্যাপারে সুন্দরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুব আলম মোবাইল ফোনে জানান, পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৭০ থেকে ৮০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/একেএ



এই পাতার আরো খবর