ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধিতে প্লাবিত বাদামের জমি
পাবনা প্রতিনিধি:

পাবনার বেড়া উপজেলা যমুনা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলের শত শত বিঘা বাদাম খেত তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার বাদামচাষিরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তলিয়ে যাওয়া বাদাম তোলার চেষ্টা করছেন। আবার কোনো কোনো স্থানে চাষিরা তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে আধা-পাকা বাদামও তুলে ফেলছেন। এতে সব মিলিয়ে বাদাম চাষে মারাত্মক লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাষীরা। 

উপজেলা কৃষি অফিস ও কৃষকদের নিকট থেকে জানা গেছে, পাবনার বেড়া ও সুজানগর উপজেলার যমুনা ও পদ্মা নদীর বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চলে প্রতিবছর প্রচুর বাদামের আবাদ হয়ে থাকে। চলতি মৌসুমে শুধুমাত্র বেড়া উপজেলার আটটি ইউনিয়নের এক হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে বাদামের আবাদ করা হয়েছে। আর দুই-এক সপ্তাহের মধ্যেই বাদাম কৃষকদের ঘরে ওঠার কথা। আবাদ করা বেশির ভাগ জমির বাদাম এখনও পুরোপুুরি পুষ্ট না হয়ে আধাপাকা অবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে। 

কৃষকেরা জানান, জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে প্রায় একমাস ধরে কৃষকেরা চরের বালুমিশ্রিত জমিতে বাদাম আবাদ করে থাকেন। আর সেই বাদাম জমি থেকে তোলা শুরু হয় মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে সাধারণত জুনের শেষ সপ্তাহের মধ্যে। ভেজা বাদাম মন প্রতি ১৮শত টাকা থেকে দুই হাজার টাকা আর শুকনা বাদাম তিন হাজার থেকে বত্রিশশত টাকা দরে বিক্রি হয়।   সম্প্রতি ভারি বর্ষণের পর থেকে যমুনার পানি দ্রুত বাড়ছে। আর এরই ফলে চরাঞ্চলের বাদামের খেত তলিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই নদীতে পানি বৃদ্ধিতে বাদাম তলিয়ে যাওয়ায় তাঁরা চরম বিপাকে পড়েছেন। এ সময়েই আবার শ্রমিক সংকটও দেখা দিয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক চাষিরা পরিবারের নারী ও শিশুসহ সব সদস্যদের নিয়ে ডুুবে যাওয়া বাদাম তুলছেন। কিন্তু এভাবে বাদাম তোলার পর অর্ধেক ফলনও পাওয়া যাচ্ছে না। এর ওপর বেশির ভাগ ডুবে যাওয়া জমি থেকে বাদাম তোলা সম্ভবও হচ্ছে না। কোনো কোনো স্থানে আবার ডুবে যাওয়ার ভয়ে শুকনো জমি থেকেও আধাপাকা বাদাম তোলা হচ্ছে। 

উপজেলার মাসুমদিয়া, রূপপুর, হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি চরাঞ্চলে ইতিমধ্যেই প্রচুর বাদামের খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। সেসব জমি থেকে কৃষক পরিবারের নারী, শিশুসহ সব সদস্য মিলে বাদাম তুলে নৌকায় করে পাড়ে নিয়ে বাদাম ছাড়াচ্ছেন। আবার কোথাও কোথাও তাঁরা জমির পাড়ে শুকনা স্থানে বাদামগাছ থেকে বাদাম ছাড়াচ্ছেন। 

রূপপুর ইউনিয়নের দড়িশরীফপুর গ্রামের বাদামচাষি আকমল হোসেন জানান, তিনি নয় বিঘা জমিতে বাদামের আবাদ করেছিলেন। আর দুই সপ্তাহ জমিতে থাকলেই সব বাদাম পুরোপুরি পুষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু যমুনার পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় তাঁর চার বিঘা জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। বাকি জমিও তলিয়ে যাওয়ার মুখে রয়েছে। তিনি জানান, তলিয়ে যাওয়া কিছু জমি থেকে তিনি বাদাম তুললেও তাতে এক চতুর্থাংশ বাদামও মিলবে না। তাঁর জমির আশেপাশে ৬০ থেকে ৭০ বিঘা বাদাম খেত তলিয়ে গেছে বলে তিনি জানান। 

কাজিরহাট লঞ্চ ঘাট এলাকার শরিফুল ইসলাম বলেন, এই ঘাটের আশেপাশে প্রচুর বাদামের খেত। এসব খেত তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের দুরবস্থা দেখে আমরা গত দুদিনে প্রচুর বাদাম তুলেছি। 

রুপপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড মেম্বর ঠান্টু শেখ জানান, গত বছরের তুলনায় এবছর বাদামের ভালো ফলন হয়েছিল। কিন্তু তিন চারদিন নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় শত শত বিঘা বাদাম ক্ষেত তলিয়ে গেছে। তবে উপজেলার অন্যান্য চরের চেয়ে কাজিরহাট এলাকা নিচু হওয়ায় এখানকার বাদামচাষীদের বেশি ক্ষতি হয়েছে। 

বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মশকর আলী বলেন, যমুনায় পানি বাড়ায় বেশ কিছু বাদামের খেত তলিয়ে গেছে। সরেজমিনে আমি নিজে গিয়ে তা দেখে এলেও তলিয়ে যাওয়া জমির পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। শিগগিরই তলিয়ে যাওয়া জমির পরিমাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকার ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হবে। 

বিডি প্রতিদিন/এএম

 



এই পাতার আরো খবর