ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বন্যায় গাইবান্ধায় ৮০ বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ
গাইবান্ধা প্রতিনিধি

চলতি বছরে টানা দ্বিতীয় দফায় পানি বৃদ্ধির ফলে বন্যার কবলে পড়েছে উত্তরের জেলা গাইবান্ধা। বন্যার কারণে সড়ক, কৃষি, মৎস্য, অবকাঠামোসহ নানা খাতে ক্ষতির মুখে পড়েছে জেলাটি। ক্ষতি হচ্ছে শিক্ষা খাতেও।

বন্যার ফলে জেলায় ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠে গেছে। আর বাকিগুলো আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সদরসহ সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭০টি ও ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে গাইবান্ধা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রোকসানা বেগম ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শিক্ষা কর্মকর্তারা জানান, টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে জেলার চার উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কেউ স্কুলে আসতে পারছেন না। এমন ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্যার পানি কমার সাথে সাথে পরিস্থিতি বুঝে এসব স্কুল ও মাদ্রসায় পাঠদান শুরু করা হবে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানির উচ্চতা ৫১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি ৪৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। করতোয়া নদীর পানি ৫০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেলেও তা ১৫৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তা নদীর পানি ২৩ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলায় ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ মিলিমিটার।

জানা গেছে, কয়েকদিন ধরেই ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে জেলার সবগুলো নদ-নদীর পানি দ্বিতীয় দফায় বাড়তে শুরু করে। ফলে নদীর তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট। এসব এলাকার বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়িসহ বিস্তীর্ণ জমির পাট, কাউন, তীল ও শাকসবজিসহ বর্ষাকালীন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে চার উপজেলার ২০ হাজার পরিবার।

বিপৎসীমার ওপরে থাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত সদরের কামারজানি, ঘাগোয়া, ফুলছড়ির ফজলুপুর, এরেন্ডাবাড়ি এলাকায় প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। পানি বৃদ্ধির ফলে এসব এলাকার ঘরবাড়িগুলোতে পানি উঠেছে। এলাকার পানিবন্দি মানুষরা গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ছেন। তবে তিস্তার পানি কমতে থাকায় সুন্দরগঞ্জের প্লাবিত এলাকা জেগে উঠতে শুরু করেছে।

অন্যদিকে, সাঘাটা উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ১৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বুধবার ভরতখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ উল্যাবাজার এলাকায় যমুনার পানির চাপে বাঁধের অন্তত ৩০ ফিট এলাকা ধসে যায়। এতে তিনটি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ২০ হাজার মানুষ। হঠাৎ করে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়ায় পরিবারের শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদি পশু নিয়ে নিয়ে বিপাকে পড়েছে বন্যা কবলিতরা।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি বেড়েছে। বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি। তবে ঝুঁকি মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে।

জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বলেন, শুকনা খাবার, চাল, মজুদ রয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ইউনিয়নভিত্তিক বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র। প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি সংক্রান্ত প্রচার-প্রচারণা চলমান রয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর