ঢাকা, রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, সোয়া লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের হাতিয়া, নুনখাওয়া ও চিলমারী এ তিনটি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে দুদিন ধরে বইছে। শনিবার সকাল থেকে কমতে থাকলেও এখনও তা বিপৎসীমার ওপরে।

এদিকে, ধরলা নদীর শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ও দুধকুমার নদের পাটেশ্বরী পয়েন্টেও পানি নতুন করে বেড়ে বিপৎসীমার যথাক্রমে ২৫ সেন্টিমিটার ও ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার ৭ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক অবনতির দিকেই যাচ্ছে। 

টানা ৬ দিনব্যাপী স্থায়ী বন্যায় ব্রহ্মপূত্র নদের তীরবর্তী এলাকার হাজার হাজার বন্যা প্লাবিত মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র উঁচু স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। জেলা প্রশাসন থেকে ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দীর কথা বলা হলেও তা কার্যত সোয়া লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে মানুষ যেসব উঁচু স্থানে গবাদিপশু রেখেছে,গত দু'দিনে হুহু করে সেসব স্থানেও পানি ওঠায় গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এসব পানিবন্দিরা। জীবন বাঁচাতে অনেকে নিজস্ব নৌকায়, উঁচু রাস্তায়,বন্যা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র,বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বসবাস শুরু করেছেন।

উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের চর বাগুয়ার মনসুর আলী জানান, এখন পর্যন্ত সরকারের কেউ খোঁজ খবর নিতে আসে নাই।ভোট দেই দিয়া কি লাভ।কেউতো খবর নিচ্ছেনা।বৃষ্টির পানিতে বাড়ির চুলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দুপুর গড়িয়ে গিয়েও রান্না করতে ব্যর্থ হয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে।একই উপজেলার হকের চরের মতিউর মিয়া জানান, ছোট মেয়েডা খুবই অসুস্থ্য।কোন ডাক্তার পাইতাছি না।ঝারফুঁক দিয়া রইছে।সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের কালির আলগা গ্রামের ছমিরণ জানান, খোলা নৌকায় গাদাগাদি কইরা একলগে আছি। সরকারিভাবে চাল-ডাল-তেল পাইলেও লাকড়ির অভাবে আন্দোন বান্দোন করবার পারতাছি না। পেলাপান খুব কান্না কাটি করতাছে।

এদিকে বন্যার পানিতে বসবাস করায় পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানা গেছে।জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর-এ-মুর্শেদ জানান,প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে ৮৩টি মেডিকেল টিম বন্যা কবলিত এলাকায় কাজ করছে।কিন্তু বাস্তবে কাউকে দেখা যায়নি।কবলিত ওই সব গ্রামে গত ৫দিন ধরে কোন মেডিকেল টিম খোঁজ খবর নেয়নি বলে বানভাসীরা জানান।

চলতি দ্বিতীয় দফা বন্যায় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমির রোপা আমন বীজতলা,পাট ও শাকসবজিসহ নানা ফসলি জমি নতুন করে নিমজ্জিত হয়েছে।জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন সরকার জানান, ২৬৫টি প্রাইমারি স্কুল সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেইসাথে মাধ্যমিক জেলা শিক্ষা অফিসার শামছুল আলম জানান, হাইস্কুল,মাদরাসা ও কলেজ মিলে মোট ১০৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও সরকারের বর্তমান শিক্ষা কারিকুলামের গত ৩ তারিখ থেকে অনুষ্ঠিত ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ণ বন্যার কারনে এসব হাইস্কুল ও মাদরাসায় স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হবে। 

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতোমধ্যে গত তিনদিন ধরে জেলার ভূরুঙ্গামারী ও রাজারহাট বাদে ৭ উপজেলায় প্রতিদিনই বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। আমরা এ পর্যন্ত নগদ ২১লাখ ৮৫ হাজার টাকা,২৯১ মে.টন চাল ও ১৫ হাজার ৩২০প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করেছি। কোথাও কোন সমস্যা থাকলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করব বলে জানান তিনি।

বিডি প্রতিদিন/এএম

 



এই পাতার আরো খবর