ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
গাইবান্ধা প্রতিনিধি

দ্বিতীয় দফা বন্যায় গাইবান্ধায় এখনও পানিবন্দি হয়ে রয়েছে ৪০ হাজরেরও বেশি পরিবারের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে আউশ ধান, পাট, ভূট্টা, বীজতলা ও শাকসবজিসহ ৬ হাজার ৪৩৬ হেক্টর কৃষি জমির ফসল। 

পানি কমা-বাড়ার ফলে গত দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় বন্যায় নিমজ্জিত থাকা জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল পাট খাত বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে রোপা আমন, তিল, কালাই, বাদাম, ভূট্টাসহ অন্যান্য শাকসবজিরও। ক্ষতি হয়েছে মৎস্যখাতেও। সবমিলিয়ে জেলার অর্থনীতিতে ঘাটতি ১০০ কোটি টাকারও বেশি।

জেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি হ্রাস পেলেও এখনও বিপৎসীমার ১২ সেমি ওপরে রয়েছে। পানি কমেছে ঘাঘট নদীরও। এদিকে বৃদ্ধি পেয়েছে করতোয়া ও তিস্তা নদীর পানি। তবে তা রয়েছে বিপৎসীমার নিচে। বিপৎসীমার ওপরে থাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত সদরের কামারজানি, ঘাগোয়া, ফুলছড়ির ফজলুপুর, এরেন্ডাবাড়ি এলাকা এখনো নিমজ্জিত রয়েছে। এতে হতাশ আর দুশ্চিন্তায় পড়েছে বন্যা কবলিতরা। পানিবন্দি এসব এলাকার মানুষজন শিশু-বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। প্রকট আকার ধারণ করেছে গো-খাদ্যসহ বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা। পানি ওঠায় ১৪৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৩টি দাখিল মাদ্রাসাসহ মোট ১৫৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রাথমিক ও জেলা শিক্ষা বিভাগ।

আজ শনিবার বিকেল ৩টায় গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায়  ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ২৩ সেমি হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ১২ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঘাঘট নদীর পানি ২০ সেমি হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ৩১ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে তিস্তার নদীর পানি ৪৪ সেমি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৯ সেমি ও করতোয়া নদীর পানি ১১ সেমি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১১৬ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বন্যায় আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, বীজতলা ও শাকসবজিসহ ৬ হাজার ৪৩৬ হেক্টর কৃষি জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৯৭৩ হেক্টর জমির ফসল পুরোপুরি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ৬৬ হাজার ৮৬৯ জন কৃষক।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খোরশেদ আলম জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে কৃষিতে ক্ষয়ক্ষতি ৭৫ থেকে ৮০ কোটি টাকার বেশি। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্র জানায়, বন্যায় গাইবান্ধায় ৯৬ দশমিক ৪৭ হেক্টর আয়তনের ৪৫৭টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এর মধ্যে ৪ কোটি ৬৩ লাখ ২২ হাজার টাকা মূল্যের বড় মাছ, ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকার পোনা ও ৩৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা মূল্যের অবকাঠামোসহ সবমিলিয়ে মোট ক্ষতি হয়েছে। এতে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটাসহ চার উপজেলায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ৩৪৭ জন মৎস্য চাষি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মারজান সরকার বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিদের প্রণোদনা দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মাহফুজুর রহমান জানান, বন্যায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ গবাদি পশু ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। খতি কমিয়ে আনতে খামারিদের জন্য গঠন করা হয়েছে ১৮টি মেডিকেল টিম। বন্যাকবলিত এলাকায় বিতরণ করা হচ্ছে গবাদি পশুর জন্য ওষুধ, স্যালাইন ও ভিটামিন ট্যাবলেট।

গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, ব্রহ্মপুত্র এখনো বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। তবে সপ্তাহখানেকের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করবে।

জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বলেন, বানভাসিদের মধ্যে শুকনো খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। সরবরাহ করা হচ্ছে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ চিকিৎসাসামগ্রী।

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল



এই পাতার আরো খবর