ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মাদারীপুরে এসপি-ডিসি অফিস ভাঙচুর, ফাঁড়িতে অগ্নি সংযোগ
বেলাল রিজভী, মাদারীপুর

মাদারীপুরে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী, পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে দফায় দফায় ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও ছাত্রলীগের ধাওয়া খেয়ে শকুনী লেকের পানিতে পড়ে  দীপ্ত দে নামে নামে এক আন্দোলনকারী কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। 

ফায়ার সার্ভিস নিহতের লাশ উদ্ধার করেছে। পুলিশ লাশ সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ উভয়পক্ষের আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। আন্দোলনকারীরা পুলিশের একটি গাড়ির সামনের কাচ ভেঙে ফেলেছে। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছে ছয় জনকে। 

এদিকে, মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর করেছে কোটা আন্দোলনকারীরা। এছাড়াও মাদারীপর শহরের লঞ্চঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নি সংযোগ এবং এসপি অফিস, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ও ভাঙচুর করেছে আন্দোলনকারীরা। 

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্র এ খবর নিশ্চিত করেছে।

পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কোটা বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে মাদারীপুর শহরের ডিসি ব্রিজ এলাকায় জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা। পরে জেলা প্রশাসকের বাসভবন সংলগ্ন মাদারীপুর-শরীয়তপুর সড়কে শকুনী লেকের পাড়ে জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এ সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ আন্দোলনকারীদেও লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করে। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় আন্দোলনকারীরা। ছাত্রলীগ ও পুলিশের ধাওয়া খেয়ে শকুনী লেকের পানিতে পড়ে যায় অর্ধশত শিক্ষার্থী। এর মধ্যে সকলেই অপরপ্রান্তে পাড়ে উঠতে পারলেও নিখোঁজ ছিল দীপ্ত দে নামে এক শিক্ষার্থী। পড়ে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দীর্ঘ সময় খোঁজার পর পানি থেকে দীপ্ত দে লাশ উদ্ধার করেন। 

নিহত দীপ্ত দে মাদারীপুর শহরের আমিরাবাদ এলাকার স্বপন দের ছেলে। সে মাদারীপুর সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। লাশ উদ্ধারের পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে আবারো সংর্ঘষ বাধে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের। এ সময় পুলিশ টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

লেকের পানিতে আরো শিক্ষার্থী নিখোঁজ রয়েছে বলেও দাবি আন্দোলনকারীদের। সংঘর্ষে  গুলিবিদ্ধসহ উভয়পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হয়। সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আহতরা। পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে ছত্রভঙ্গ হয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছে ছয় জনকে। ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা শকুনী লেকে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। 

এদিকে, দিপ্ত দে নিহতের ঘটনায় আন্দোলনকারীরা পুলিশ ও ছাত্রলীগকে দোষারোপ করছেন। তাদের দাবি পুলিশ ও ছাত্রলীগের কারণে প্রাণ দিতে হয়েছে দিপ্তকে। দিপ্ত নিহত হওয়ার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে পুরো শহরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। দুপুরের দিকে মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর করে। বিকেলের দিকে শহরের লঞ্চঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নি সংযোগ করে বিক্ষুব্ধরা। 

এদিকে, পানিতে ডুবে দুইজন নিখোঁজ রয়েছে বলে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি। তার নাম ঠিাকানাও নিশ্চিত করতে পারেনি কোনো পক্ষই। তবে দিপ্ত দে নামে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।   মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মেডিকলে অফিসার ডা. রিয়াদ মাহমুদ বলেন, ৫০ জনের মতো এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এদের কারো কারো অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। মৃত্যু অবস্থায় একজনের মরদেহ আনা হয়েছিল হাসপাতালে।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান ফকির বলেন, আন্দোলনকারীরা পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন দিয়েছে। এসপি অফিস-ডিসি অফিস ভাঙচুর করেছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। লেকের পানি থেকে এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) আজমেরী হক বলেন, আন্দোলনকারীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জানালার গ্লাস ভেঙেছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত



এই পাতার আরো খবর