ঢাকা, বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মাদারীপুরে ৫ মামলায় আসামি ৮ শতাধিক
৪০ কোটি টাকার ক্ষতি
বেলাল রিজভী, মাদারীপুর

মাদারীপুরে ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচটি মামলায় ৮ শতাধিক আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় বুধবার দুপুর পর্যন্ত শতাধিক গ্রেফতার করা হয়। মামলা ও আসামির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।

এদিকে, হামলার কারণে ধ্বংসস্তূপে রূপ নিয়েছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা। এসব স্থাপনা নতুন করে ঠিক করতে সময় লাগবে প্রায় ৬ মাস।

গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের রক্তক্ষয়ী ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনায় মাদারীপুরে তিনজন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধরা সরকারি-বেসরকারি অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় একটি পেট্রল পাম্প, ৩২টি যাত্রীবাহী বাস, ৩টি ট্রাকসহ একাধিক ছোট যানবাহন। এতে ৪০ কোটি ৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সকালে শহরের ডিসি ব্রিজ এলাকায় আন্দোলনকারীদের অবরোধ কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশের লাঠিপেটা এবং ছাত্রলীগের হামলার পরে ধাওয়া খেয়ে লেকের পানিতে পড়ে দীপ্ত দে নামে এক কলেজছাত্র মারা যায়। এরপরেই আন্দোলনকারীরা বিক্ষুব্ধভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে এক যোগে হামলা চালায়।

এ সময় তারা জেলা আওয়ামী লীগের কর্যালয়, এসপি-ডিসির কার্যালয়সহ বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা করে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ ছাড়া সদর থানাধীন ১ নম্বর পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

পরের দিন শুক্রবার দুপুর ৩টার দিকে আন্দোলনকারী অন্তত ৫/৭ হাজার মানুষ শেখ হাসিনা মহাসড়কের মস্তফাপুর থেকে একযোগে হামলা চালানো শুরু করে। প্রথমে তারা মস্তফাপুর গোল চত্বরের ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও একটি প্রাইভেটকারে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তারা পল্লী বিদ্যুতের গেস্ট হাউসে ভাঙচুর চালায়। এরপর খাগদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও শাজাহান খানের অনুসারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ ও গোলাগুলি হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে রোমান বেপারী ও তাওহীদ সন্নামাত নামে দু’জন নিহত হয়। অন্তত শতাধিক মানুষ আহত হন।

পরে আন্দোলনকারীরা পুলিশের প্রতিরোধ ভেঙে শাজাহান খানের মালিকানাধীন সার্বিক পেট্রল পাস্পে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। একই সময় তারা পেট্রল পাস্পের পেছনে থাকা সার্বিক পরিবহনের ডিপোতে আগুন দেয়। আগুনে সার্বিক পরিবহনের অন্তত ৩২টি বাস পুড়ে যায়, ভাঙচুর করা হয় আরও পাঁচটি বাস। এ সময় পাম্পে থাকা পাঁচটি মোটরসাইকেল, তিনটি ট্রাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে তারা নতুন বাসস্ট্যান্ড, সার্কিট হাউস, লেকভিউ হোটেল, মহিলা সংস্থা কার্যালয়, পৌর মুক্তিযোদ্ধা অডিটোরিয়াম ভবনে ভাঙচুর চালায়। শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে শহরের শকুনিলেকের দক্ষিণপাড়ে অবস্থিত ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পৌর মুক্তিযোদ্ধা অডিটোরিয়াম ভবনটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নতুন বাসস্ট্যান্ডের পাশেই সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান এমপির মালিকানাধীন সার্বিক পেট্রল পাম্প ও বাসডিপো। আগুনে পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে যাত্রীবাহী বাসগুলো। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পেট্রল পাম্পের যন্ত্রাংশ। একই অবস্থা পৌর মুক্তিযোদ্ধা অডিটোরিয়াম ভবনটি। অডিটোরিয়ামের ভেতরে থাকা সব চেয়ার টেবিলসহ সকল আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে পড়ে রয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়টির দশাও করুণ। ভাঙচুর করা হয়েছে আসবাবপত্র ও দরজা-জানালা।

মাদারীপুর শহরের বাসিন্দা বিল্লাল মোল্লা বলেন, আমার বয়স ৪০ বছর। আমরা জীবনে মাদারীপুরে এ রকম ধ্বংসযজ্ঞ দেখি নাই।

সার্বিক পরিবহনের ব্যবস্থাপক গোপাল হালদার বলেন, আমাদের কোম্পানির বাসগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আমাদের প্রায় ৩৫ কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয়েছে। সরকারিভাবে সাহায্য- সহযোগিতা পেলে পেট্রল পাম্পসহ পরিবহন চালু করতে ৬ মাসের অধিক সময় লেগে যাবে।

পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ বলেন, অগ্নিকাণ্ডে পৌর অডিটোরিয়ামের ৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ছাত্রদের আন্দোলনকে ইস্যু করে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন চোরাগুপ্ত হামলা শুরু করেছে। এর আগে তারা ভাঙচুর চালিয়েছে। সরকারি বিভিন্ন স্থাপনাকে তারা লক্ষ্য করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাই।

মাদারীপুরের অতিরিক্তি পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা বলেন, হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫টি মামলা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৮ শতাধিক। দোষীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। মামলার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশীদ খান বলেন, তদন্ত কমিটি করে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়েছে। পুরো জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৪০ কোটি ৮ লাখ টাকা।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর