ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

নৌকা তৈরি ও মেরামত কাজে ব্যস্ত পাবনার কারিগররা
পাবনা প্রতিনিধি

বর্ষার আগমনে পাবনায় কয়েকদিন ধরে ভারীবর্ষণ ও বৃষ্টিতে নদীতে ব্যাপক পরিমাণে পানি বেড়েছে। শুরু হয়েছে পদ্মা-যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন। ইতিমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে ধান, বাদাম ক্ষেতসহ কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি। পানি বাড়ার সাথে সাথে নৌকার মালিকরা নতুন নৌকা তৈরি ও পুরাতন নৌকা মেরামতের কাজ শুরু করায় স্থানীয় মিস্ত্রিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। বর্ষা মৌসুমের কিছুটা আগেই নদীর পানি থই থই করায় নৌকা ব্যবসার সাথে জড়িতরা আগাম প্রস্তুতি নেওয়ায় মিস্ত্রিদের কদর বেড়েছে।

ছয়টি নদী ও অর্ধশতাধিক বিলবেষ্টিত পাবনার বেড়া উপজেলার রয়েছে অর্ধশতাধিক চরাঞ্চল। তার মধ্যে প্রায় ২২টি চরে রয়েছে মানুষের বসবাস। কয়েক হাজার পরিবারের বসবাস এসব চরে শুকনো মৌসুমে যোগাযোগের জন্য পায়ে হাঁটার পথ থাকলেও বর্ষা মৌসুমে তা একেবারেই থাকে না। জীবন ও জীবিকার জন্য নৌকা যেন নিত্যদিনের অপরিহার্য জিনিস।

প্রতিটি গ্রাম, প্রতিটি বাড়ি যেন একেকটি আলাদা আলাদা দ্বীপ। তাই বর্ষা মৌসুমে যোগাযোগের জন্য নৌকাই একমাত্র ভরসা। প্রায় প্রতিটি পরিবারেই রয়েছে একটি করে নৌকা। এসব নৌকাই তাদের চলাচলের প্রধান ভরসা। বর্ষার কারণে ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়া-আসা বন্ধ থাকলেও জীবন জীবিকার জন্য অসুখে জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতালে পৌঁছানো সব কাজেই প্রয়োজন হয় নৌকার। তাছাড়া মাছ ধরা তো আছেই। তাই এ মৌসুমে নৌকা কেনা ও পুরাতন নৌকা মেরামতের ধুম পড়ে যায় বিভিন্ন উপজেলায়।

এসব উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নেই নৌকার ব্যবহার হয়। তার মধ্যে সুজানগর উপজেলার দুলাই, মানিকহাট, রানীনগর, আহমেদপুর, চাটমোহর উপজেলার, ছাইকোলা, নিমাইচরা, হান্ডিয়াল, ফুরিদপুর উপজেলার পুঙ্গুলী, আরকান্দি, হাদল, বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন, কৈটলা, নতুন ভারেঙ্গা, পুরান ভারেঙ্গা, নগরবাড়ী, রূপপুর, ঢালারচর এসব ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ইতিমধ্যেই চরগুলোর বেশিরভাগ এলাকা ডুবে গেছে। বেড়া উপজেলার নাকালিয়া বাজার সংলগ্ন যমুনা নদীর পাড়ে পুরাতন নৌকা মেরামত করতে ব্যস্ত সময় পার করছে নৌকার কারিগররা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ উপজেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক কারখানায় নৌকা তৈরি হয়। যে সমস্থ নৌকা ব্যবহারের একেবারেই অনুপযোগী, সেগুলোর কাঠ দিয়ে তৈরি করছে চৌকি। নৌকার কাঠের তৈরি চৌকি খুব টেকসই হওয়ায় এর চাহিদা ও দাম বেশি।

কথা হয় আবুল মিস্ত্রির সাথে। তিনি জানান, বর্ষা আসার আগেই প্রায় সব নৌকাই ঠিকঠাক করে আলকাতরা দেওয়া হয়। আর একেবারেই ভাঙা নৌকার কাঠ দিয়ে আমরা চৌকি বানিয়ে বিক্রি করি। তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকার চৌকি এখানে পাওযা যায়। এই চৌকি ৫০-৬০ বছরে ঘুণেও খায় না, নষ্টও হয় না।

আমিনপুর বাসস্ট্যান্ডের মনিরুল ইসলামের কারখানায় দেখা যায় নৌকা তৈরির ব্যস্ততা। তার পাঁচটি কারখানায় ২০ জন মিস্ত্রি কাজ করছে। তৈরি নৌকাগুলো সারিসারি রাখা হয়েছে। আর নিজে ব্যস্ত নতুন নৌকা তৈরিতে। তার কাছ থেকে জানা যায়, কম দামের নৌকা তৈরিতে জল কড়ই, ডেম্বুল, কদম ইত্যাদি কাঠ ব্যবহার করা হয়। যার দাম ৩ হাজার ৫০০ থেকে আকার অনুসারে ৬-৭ হাজার টাকা। আর প্লেনসিটের তৈরি নৌকা ৮ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

নৌকা কিনতে আসা চরনাগদাহ চরের বাসিন্দা শেখ আহমদ আলী জানান, দুই সপ্তাহ আগেই নৌকা কেনার দরকার ছিল, এখন না কিনে আর পারছি না। গরুর ঘাস কাটা, মাছ ধরা ও পারাপারের জন্য নৌকা কিনতে আসছি, নৌকা ছাড়া বর্ষায় আমরা অচল।

পেচাকোলা গ্রামের বাসিন্দা অপূর্ব অপু জানান, বর্ষার আগেই কয়েকদিনের বৃষ্টিতে প্রায় চারদিকেই পানি চলে এসেছে, গতবছরের নৌকাটা বিক্রি করে দিয়েছি। আর আমাদের এ মৌসুমে নৌকা ছাড়া চলে না। তাই নৌকা দেখতে  এসেছি, দাম গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি। দামদর করে যদি কেনা যায়, তাহলে আজই কিনে নিয়ে যাব।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর