ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

আওয়ামী লীগ কার্যালয় পোড়ানো মামলার আসামি পদত্যাগী ছাত্রলীগ নেতা
নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া
জাকি তাজওয়ার

কোটাব্যবস্থার সংস্কার দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করা এক নেতাকে দলীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় আসামি করা হয়েছে। তার নাম জাকি তাজওয়ার। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের উপদফতর সম্পাদক ছিলেন। জাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধ্যয়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। 

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক খালেকুজ্জামান রাজা বাদী হয়ে গত মঙ্গলবার বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলার এজাহারে ১২ নম্বর আসামি করা হয়েছে জাকি তাজওয়ারকে।

জানা গেছে, জাকি তাজওয়ার বগুড়া জিলা স্কুলের ২০১৯ সালের এসএসসি ব্যাচ এবং সরকারি আজিজুল হক কলেজের ২০২১ সালের এইচএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাবা মাহতাব উদ্দিন বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের গণিত বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। গত ১৬ জুলাই বগুড়া শহরের সাতমাথায় জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর রাতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন জাকি তাজওয়ার।

পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে জাকি ফেসবুকে লেখেন, “... লুকানোর কিছু নেই। ছাত্রলীগের মিছিলে স্লোগানে পেয়েছেন। তারুণ্যের জয়গানে পেয়েছেন। কখনও কি সহিংসতায় দেখেছেন? আক্রান্ত হয়েছেন? আজ আমরা আক্রান্ত, আপনাদের সঙ্গে আক্রান্ত। নীতি আর আদর্শের ভাষা এসব শেখায়নি। আমরা এ দেশের সন্তান। বড় করে বলি সূর্যসন্তান। আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?”

জাকি তাজওয়ারকে যে মামলায় আসামি করা হয়েছে, ওই মামলার এজাহারে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার ছাড়াও বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীসহ ৮৭ জনের নাম আছে। এর মধ্যে কয়েকজন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়া বগুড়ার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (বিআইআইটি) অধ্যক্ষ প্রকৌশলী শাহাবুদ্দিন সৈকত ও ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (আইআইটি) পরিচালক সবুর শাহ লোটাসকেও আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, এজাহারনামীয় আসামি ছাড়া অজ্ঞাত ১০০ থেকে ১৫০ আসামি দেশি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। তারা কার্যালয়ের মালামাল লুট করেন। এছাড়া টাউন ক্লাব ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খানের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেন।

মামলার আসামি হওয়ার ব্যাপারে জাকি তাজওয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, “ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগের কারণেই আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় পোড়ানো মামলার আসামি হয়েছি, এমনটা না–ও হতে পারে। কেউ হয়তো আওয়ামী লীগ নেতাদের ভুল বুঝিয়ে আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছেন।”

তিনি বলেন, “১৬ জুলাই বগুড়া জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করার প্রস্তুতি নেয়। জিলা স্কুলের প্রতীকী ছাত্র সংসদের একাধিকবার ভিপি ছিলাম। এ কারণে কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ওই দিন মিছিলে যোগ দিই। কিন্তু মিছিলে হামলা করা হয়। এতে জিলা স্কুলের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীরা যোগ দেয়। দ্বিতীয় দফা সাতমাথায় মিছিল নিয়ে যাওয়ার পর আবারও ককটেল হামলা হয়। এতে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হলেও কোনও প্রকার ভাঙচুর কিংবা জ্বালাও–পোড়াও করেনি। সহিংসতা শুরু হলে শিক্ষার্থীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। সাতমাথায় বহু সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। ফুটেজ সংগ্রহ করে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা উচিত। হামলা ও অগ্নিসংযোগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা নেই। অথচ ওই দিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যা মামলায় আমাকে আসামি করে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা বলেন, জাকি তাজওয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিনি সেখানে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেছেন। বগুড়ার রাজনীতির সঙ্গে তিনি জড়িত নন।

বিডি প্রতিদিন/একেএ



এই পাতার আরো খবর