ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

অতিজোয়ারের পানিতে দিনে দুইবার তলিয়ে যায় নিম্নাঞ্চল
ভেসে গেছে মাছের ঘের, নষ্ট হচ্ছে সবজি ক্ষেত
ভোলা প্রতিনিধি

ভোলায় সাগরের নিম্নচাপের প্রভাবে অতিজোয়ারের পানিতে দিনে দুইবার করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে দিনে দুইবার জোয়ারের সময় কয়েক ফুট পানিতে প্লাবিত হয় মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো। বিশেষ করে ইলিশা ফেরিঘাট, লঞ্চঘাটসহ রাজাপুর, কাচিয়া, বাপ্তা, ধনিয়া, শিবপুর, পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নসহ বাঁধের বাইরের অন্তত ৪০টি গ্রামের কয়েক হাজার বাড়িঘর তলিয়ে যায়। 

ইতোমধ্যে এইসব এলাকার শত শত পুকুর, মাছের ঘের ডুবে গিয়ে ভেসে গেছে কোটি টাকার মাছ। নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার একর সবজি ক্ষেত ও আমনের বিজতলা। দিনে দুইবার জোয়ারের পানিতে তলিয়ে থাকে সেখানকার মানুষের ঘরবাড়ি। এতে করে ভোগান্তিতে রয়েছেন তারা। এছাড়াও অতি জোয়ারে ভোলার বেড়ি বাঁধের বাইরে দিনে দুইবার প্লাবিত হওয়ায় অনেক পরিবারের চুলায় আগুন জ্বলছে না। পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে নিম্ন আয়ের হাজার হাজার মানুষ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ কেউ তাদের খবর নিচ্ছেন না।  

শুক্রবার বিকালে পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া খালের তীরবর্তী লাশকান্দা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের রাস্তাঘাট সব পানির নিচে। ওই গ্রামের প্রতিটি বাড়িঘর দুই থেকে আড়াই ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। জোয়ারের সময় অনেকে ঘরের মধ্যে মাচায় উঠে বসে থাকেন। ওই গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা রহিজল, ইউসুফ, সফিজল, আবুল কালামসহ স্থানীয়রা জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে দিনে দুইবার জোয়ারের পানিতে রাস্তাঘাট সব তলিয়ে যায়। জনপ্রতিনিধিরা কেউ তাদের খবর নিচ্ছে না। একই অবস্থা পূর্ব ইলিশা, রাজাপুর, কাচিয়া, ধনিয়া, বাপ্তা শিবপুর এলাকায়। শিবপুর ইউনিয়নের কালিকীর্তি এলাকার লোকজন জানান, জোয়ারের সময় বাধের বাইরের সব বাড়িঘর ডুবে যায়। দুই তিন ঘণ্টা পর আবার ভাটায় পানি নেমে যায়। তবে নিয়মিত প্লাবিত হওয়ায় এলাকাবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 

সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের কন্দ্রকপুর গ্রামের বাসিন্দা ছাদেক হাওলাদার জানান, গত চার দিন ধরে এলাকার রাস্তাঘাট জোয়ারের সময় দুই থেকে তিন ফুট পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এতে পানিবন্দি হয়ে থাকতে হচ্ছে ওই এলাকার প্রায় ৫ হাজার মানুষকে।

একই এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম জানান, তিনি ৬০ হাজার টাকা খরচ করে ৫০ শতাংশ জমিতে লাউ এবং  ৪০ হাজার টাকা খরচ করে ৫৬ শতাংশ জমিতে দুন্দল করেছেন। জোয়ারের পানিতে সব গাছ মরে যাচ্ছে। এছাড়া তার ১২ শতাংশ জমির আমনের বীজতলাও পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। 

এদিকে ইলিশা ফেরি ঘাটের ম্যানেজার পারভেজ আলম জানান, অতি জোয়ারের পানিতে ফেরির দুটি পন্টুন ও গ্যাঙওয়ে ডুবে যাওয়ায় ফেরি চলাচল ব্যহত হয়। জোয়ারের সময় লোড আনলোড বন্ধ থাকে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন পন্যবাহী ট্রাক চালক ও শ্রমিকরা। জোয়ারের পানির কারনে ইলিশা ঘাটে যানবাহন নিয়ে ফেরি আসলেও নামতে কয়েক ঘণ্টা বিলম্ব হয়। গত চার দিন ধরে ইলিশা ফেরিঘাটের এমন পরিস্থিতি। ভোলা-লক্ষ্মীপুর ফেরির সহকারী ব্যবস্থাপক আতিকুজ্জামান জানান, জোয়ারের পানির কারণে ফেরিঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সাময়িক সময়ের জন্য ফেরিচলাচল বন্ধ থাকে। তিনি আশা করছেন, জোয়ারের পানি কমে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। 

এদিকে ভোলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে নদ নদীর পানি বেড়েছে। গত বুধবার মেঘনা নদীতে পানি বিপদ সীমার সর্বোচ্চ ১০৩ সিন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার রেকর্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ছিল ৮৯ সেন্টিমিটার এবং শুক্রবার সর্বোচ্চ বিপদসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, আগামী তিন চারদিন পর হয়তো জোয়ারের পানি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর