ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বগুড়ায় হাট-বাজারগুলোতে বাড়তি টোল আদায়
নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বগুড়ার শেরপুরে পৌরসভাসহ অন্যান্য হাট-বাজারগুলোতে সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে বাড়তি খাজনা (টোল) আদায় করা হচ্ছে। সাধারণ ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের জিম্মি করে ইজারাদার ও তাদের নিয়োগ করা লোকজন ইচ্ছেমতো খাজনার নামে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করছেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। এদিকে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটলেও অজ্ঞাত কারণে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। ফলে ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, সরকারি খাজনার (টোল) হার পণ্যপ্রতি বড় ব্যানারে প্রকাশ্যে হাট-বাজারগুলোতে টানানোর নিয়ম থাকলেও শেরপুর উপজেলার সিংহভাগ হাটে সেটি করা হয়নি। যে কারণে পণ্যের নির্ধারিত খাজনার হার সম্পর্কে কিছুই জানেন না সাধারণ মানুষ। তাদের অন্ধকারে রেখে ইজারাদার ও তাদের লোকজন নিজেদের ইচ্ছেমাফিক ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের নিকট থেকে খাজনার নামে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার জামাইল ও রানীরহাটে এমন সত্যতা পাওয়া যায়। হাটে দেখা যায়, ৮০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা ধানে নির্ধারিত খাজনা ১৬ টাকার স্থলে নেওয়া হচ্ছে ২২ টাকা। একইভাবে ৫০ কেজি মাছের জন্য ২০ টাকার স্থলে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা এবং এক ডালি মাছের জন্য ১০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হকসহ একাধিক ব্যবসায়ীরা জানান, হাটে আসা ব্যবসায়ী, ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের নিকট থেকেই খাজনা নেওয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না সরকার নির্ধারিত খাজনার হার। এ ছাড়া সপ্তাহের দুইদিন (হাটবার) খাজনা নেওয়ার কথা থাকলেও প্রতিদিনই খাজনার নামে বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে।

সবজি ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন জানান, ফুলবাড়ী বাজার থেকে এক মণ সবজি কিনলে খাজনা দিতে হয় ৪০ টাকা আর বিক্রেতাকে দিতে হয় ২০ টাকা। যা সরকার নির্ধারিত খাজনার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।

চাতাল ব্যবসায়ী গোলাম রব্বানী জানান, শেরপুর আলীয়া মাদ্রাসা এলাকায় বারোদুয়ারি হাটের দিন সকালে ধান বেচাকেনা হয়। এখানে প্রতিমণ ধানের খাজনা নেওয়া হয় ২৮ থেকে ৩০ টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও দ্বিগুণ হারে খাজনা নেওয়া হচ্ছে। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে না চাইলে মারধরের শিকার হন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি হাটে বসতে দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ করেন।

তাদের দাবি, হাটে সরকার নির্ধারিত টোল নির্ধারণ করা কোনো চার্ট না থাকায় সে সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। তাই খাজনা আদায়কারীদের দাবি অনুযায়ী টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ছাড়া বাড়তি টোলের কোনো রশিদ দেওয়া হয় না বলেও দাবি করেন।

জামাইল হাটের ইজাদারের আদায়কারী বক্স মিয়া জানান, এই হাট ইজারায় সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি টাকায় ইজারা নেওয়া হয়েছে। তাই সেই টাকাতো তুলতে হবে। এজন্য একটু বেশি নেওয়া হয়। এ ছাড়া সরকার নির্ধারিত খাজনার চার্ট বা ব্যানার উন্মুক্ত স্থানে ইজারাদাররা টানায় না। এটি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে টানানোর কথা বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে, সাধারণ ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের জিম্মি করে খাজনার নামে জোরপূর্বক চাঁদা আদায়ের ঘটনার প্রতিবাদে মাঠে নেমেছেন ছাত্র-জনতা। এরই মধ্যে চাঁদাবাজি রুখতে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় সমন্বয়করা।

সমন্বয়ক তৌকির আহমেদ জানান, সরকার নির্ধারিত খাজনার যে রেট রয়েছে, তার বাইরে টাকা আদায় বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আহ্বান জানানো হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুমন জিহাদী জানান, হাটের ইজারাদারদের বাড়তি টাকা আদায় না করতে সতর্ক করা হয়েছে। এ ছাড়া ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকেও বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত টোল না দিতে মাইকিং করা হচ্ছে। হাটগুলোতে খাজনার চার্ট বা ব্যানার টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর