ঢাকা, রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সুন্দরবনে তীব্র ভাঙনে ঝুঁকিতে ১৪ বন অফিস, সমুদ্র সৈকত
শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর এবার তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সুন্দরবন। ইতোমধ্যেই স্থলভাগে তীব্র ভাঙন দেখা দেয়ায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে সুন্দরবনের সমুদ্র ও বড় বড় নদী তীরবর্তী বন বিভাগের ১৪টি বন অফিসের সব স্থাপনা। 

মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে ভাঙন এতোটাই ভয়াবহ অবস্থা ধারন করেছে যে কয়েটি বন অফিসের মাত্র কয়েক হাত কাছাকাছি চলে এসেছে। এমনকি বঙ্গোপসাগরের তীব্র ভাঙনের কবলে পড়ে সুন্দরবনের এক জায়গায় বসে সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত দেখার নয়নাভিরাম প্রাকৃতির লীলাভূমি ‘জামতলা সী-বিচ’ এখন অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। সুন্দরবনে সাগর নদীর তীব্র ভাঙনের মুখে পড়া বন অফিসগুলোর মধ্যে রয়েছে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দূবলার অস্থায়ী শুটকি পল্লী, শ্যালারচর, আলোরকোল, কোকিলমুনি, বগী, শরণখোলা, কটকা, কচিখালী, চান্দেরশ্বর টহল ফাঁড়ি, চাঁদপাই রেঞ্জের ঝাঁপসি, শুয়ারমারা, জোংড়া, হারবাড়ীয়া এবং করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্র। ভয়াবহ এই ভাঙনের ফলে ছোট হয়ে আসছে সুন্দরবনের স্থল ভাগের আয়তন। সুন্দরবন বিভাগ এতথ্য নিশ্চিত করেছে।   জীববৈচিত্র্যের আধার ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইড (বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা) সুন্দরবনের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিাটার। এরমধ্যে স্থল ভাগের পরিমাণ ৪ হাজার ১৪২ দশমিক ৬ বর্গ কিলোমিটার, আর জল ভাগের পরিমান ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গ কিলোমটার। সুন্দরবন সংলগ্ন সমুদ্র লাকার পরিমাণ ১ হাজার ৬০৩ দশমিক ২বর্গ কিলোমিটার। বিশ্বের এই বৃহৎ জলাভূমিও আন্তর্জাতিকভাবে ‘রামসার এলাকা’ হিসেবে স্বীকৃত। পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ এই সুন্দরবনে রয়েছে ১৮৪ প্রজাতির গাছপালা, ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও ২৯২ প্রজাতির মৎস্য সম্পদ। সাগর নদীর তীব্র ভাঙনের মুখে পড়ে এখন অস্তিস্ব সংকটে পড়েছে সুন্দরনবন। এই অবস্থায় দ্রুত ভাঙন মোকাবেলায় পানি উন্নয়ন বের্ডের সহয়তা চেয়েছে সুন্দরবন বিভাগ।   সরেজমিনে সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কোকিলমুনি, বগী, কটকা, কচিখালী, চান্দেরশ্বর টহল ফাঁড়ি ও , চাঁদপাই রেঞ্জের ঝাঁপসি, শুয়ারমারা, জোংড়া টহল ফাড়ি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সাগর সংলগ্ন এসকল বন  অফিসের অনেক এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঝাপসি টহল ফাঁড়ির এক বনকর্মী  জানান, আমাদের অফিসের মাত্র কয়েক হাত দূরেই নদী চলে এসেছে। গত কয়েক দিন ধরে তীব্র ভাঙনে অফিস সংলগ্ন এলাকার বেশ কিছু এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। আমরা অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি যেকোনো সময়ে আমাদের টহল ফাঁড়িটি নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে। একই অবস্থা কটকা ফরেস্ট স্টেশনের। এখানকার দায়িত্বরত স্টেশন কর্মকর্তা সুরজিত চৌধূরী বলেন, গত এক মাস ধরেই তীব্র ভাঙনের মুখে আমরা রয়েছি। দিনকে দিন ভাঙন বেড়েই চলেছে।   শরণখোলা বন অফিসের স্টেশন কর্মকর্তা  ফারুক আহমেদ বলেন, সাগর সংলগ্ন নদীর পাড়ে এমন ভাঙন ইতোপূর্বে দেখা যায়নি। আমরা আতংকিত অবস্থায় দিন যাপন করছি। প্রতিদিন অফিস সংলগ্ন বনের এলাকা পানির তোড়ে নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে।   এবিষয়ে কথা হলে শরণখোলা রেঞ্জ অফিসের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) শেখ মাহাবুব হাসান বলেন, শরণখোলা রেঞ্জের মধ্যে ৯টি বন অফিস ও টহল ফাড়িসহ জামতলা সী-বিচ মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে সাগর ও নদী ভাঙন এতোটাই ভয়াবহ অবস্থা ধারন করে কয়েটি বন অভিস ভাঙনের মাত্র কয়েক হাত কাছাকাছি চলে এসেছে। এসব বন অফিসের সব অবকাঠামো যে কেন মুহূর্তে নদী ও সমুদ্রে তলিয়ে যেতে পারে। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহাম্মদ নূরুল করিম জানান, সুন্দরবনের স্থল ভাগ সমুদ্র ও নদী ভাঙনের স্থানে আমরা ভাঙা নৌকা ডুবিয়ে রেখে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। ইতিমধ্যে দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেকে ভাঙনের বিষয়টি জানানোর পর তারাও আন্ত:মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে সুন্দরবনের স্থল ভাগের এই ভাঙন দ্রুত প্রতিরোধে বিষয়ে আলোচনা চলছে।  

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল



এই পাতার আরো খবর