ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

রি-এজেন্ট সংকটের অজুহাতে ডেঙ্গু সনাক্তরন পরীক্ষা বন্ধ, দ্বিগুন অর্থ আদায়ের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বরিশালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে শেরে-ই বাংলা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৪৪ জন রোগী। কিন্তু ভর্তি হওয়া রোগীদের ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নেই এন্টিজেন ডিভাইস। 

এদিকে, ডেঙ্গু পরীক্ষায় সরকার ৫০০ টাকা ফি নির্ধারন করে দেয়ায় অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার লোকসানের অজুহাতে এনএস ওয়ান (ডেঙ্গু সনাক্তকরন) পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছে। দু’একটি সনামখ্যাত ডায়াগনস্টিক সেন্টার এনএস ওয়ান পরীক্ষা করালেও ৯০০-১০০০ টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অতিরিক্ত অর্থ খরচ হলেও বিপদের মুহূর্তে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে পেরেই খুশী রোগীরা স্বজনরা। তাই এ নিয়ে কোন প্রতিবাদও করছেন না। 

শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল (শেবাচিম) সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই থেকে আজ রবিবার সকাল পর্যন্ত এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৬০জন রোগী। এদের মধ্যে চিকিৎসায় সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১১০ জন এবং মারা গেছেন ২জন। 

রবিবার সকাল পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলো ১৪৮জন ডেঙ্গু রোগী। এদের মধ্যে পুরুষ ৯৬জন, মহিলা ৪২ জন এবং শিশু রয়েছে ১২ জন। সব শেষ বিগত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৪ জন। যার মধ্যে পুরুষ ২৪ জন, মহিলা ১৬ জন এবং শিশু রয়েছে ৪ জন। 

এদিকে, হাসপাতালে নতুন ভর্তি হওয়া রোগীদের ডেঙ্গু পরীক্ষার কোন ব্যবস্থা করা হয়নি রবিবার সকাল পর্যন্ত। ডেঙ্গুর প্রাথমিক পর্যায় সনাক্তকরনের ডিভাইস ‘এন্টিজেন’ না থাকায় এই রোগ পরীক্ষা করতে পারছেন না তারা। বরিশাল সহ সারা দেশে এন্টিজেন পাওয়া যাচ্ছে না বলে ধারাবাহিকভাবে দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন শেবাচিম পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন। 

দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের আধুনিক চিকিৎসার ভরসাস্থল শেবাচিম হাসপাতালে ডেঙ্গু সনাক্তকরন পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় বিপাকে পড়েন রোগী ও তাদের স্বজনরা। ডেঙ্গু পরীক্ষায় সরকার নির্ধারিত ৫০০ টাকা ফি কম হয়েছে দাবী করে বেশীরভাগ বেসরকারী ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো ‘রি-এজেন্ট’ অজুহাতে কৌশলে ‘এনএস ওয়ান’ পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়। খ্যাতনামা দু-একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ‘এনএস ওয়ান’ পরীক্ষা করা হলেও ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। 

বরিশাল সরকারী মহিলা কলেজ পড়ুয়া মেয়ের জ্বর হওয়ায় গত শনিবার দুপুরে তাকে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করেন অভিভাবকরা। ডেঙ্গু হয়েছে কিনা সেই পরীক্ষার ব্যবস্থা হাসপাতালে না থাকায় হাসপাতালের সামনের বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান তার অভিভাবক স্বাস্থ্য বিভাগের চাকুরীজীবী মো. মহসিন খান। কিন্তু ‘রি-এজেন্ট’ না থাকার অজুহাতে মেডিকেলের সামনের কোন ডায়াগনিস্টক সেন্টারে ‘এনএস ওয়ান’ পরীক্ষা করাতে পারেননি তিনি। 

তার দাবি, সরকার নির্ধারিত ফি কম হওয়ায় অজুহাতে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো ডেঙ্গু পরীক্ষার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। পরে তিনি অন্যান্য রোগীর স্বজনদের পরামর্শে সদর রোডের বেলভিউ ডায়ানস্টিক সেন্টারে যান এনএস ওয়ান পরীক্ষা করাতে। সেখানে তার কাছে ডেঙ্গু পরীক্ষায় ১ হাজার টাকা দাবি করে বেলভিউ কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত শনিবার দুপুর ২টার দিকে নগরীর সদর রোডের ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ৯০০ টাকা খরচ করে মেয়ের ‘এনএস ওয়ান’ পরীক্ষা করাতে সক্ষম হন তিনি। সরকার নির্ধারিত ফি’র প্রায় দ্বিগুন খরচ হলেও বিপদের সময় মেয়ের রোগ পরীক্ষা করাতে পেরেই খুশী স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারী মহসিন খান। 

তার মতো একই অবস্থা জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অন্যান্য রোগীদের। অপরদিকে, রোগ পরীক্ষার পর রিপোর্ট পেতে সময় লাগছে কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা। এ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ দেখা গেছে রোগীর স্বজনদের।    বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ডেঙ্গু পরীক্ষায় সরকার নির্ধারিত ফি’র ৫০০ টাকার বেশী কেউ নিতে পারবে না। যদি কেউ সরকারী নির্দেশ অমান্য করে ডেঙ্গু পরীক্ষায় অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে তাহলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন তিনি। এছাড়া সংকটকালীন সময়ে রি-এজেন্ট না থাকার অজুহাতে যে সকল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ডেঙ্গু পরীক্ষা করছে না তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারী দেন বরিশালের সিভিল সার্জন। 

বিডি প্রতিদিন/ তাফসীর আব্দুল্লাহ



এই পাতার আরো খবর