ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

‘ইটস অ্যা বয়’, যা এখন শুধুই শোকগাথা
অনলাইন ডেস্ক
'সাধ' অনুষ্ঠানে স্ত্রী মালিহার সঙ্গে ছবিটি তুলেছিলেন নাফিস ইমতিয়াজ। ফেসবুক থেকে

দু’চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন মালিহা ও নাফিস ইমতিয়াজ দম্পতি। ভবিষ্যতের সেই স্বপ্ন ছুঁতে ক্ষণ গণণা করছিলেন এক সঙ্গে। কেননা, আর মাত্র দু’ মাস পরই এই দম্পতির মাঝখানে অফুরন্ত আনন্দ আর শান্তির বার্তা নিয়ে আসত এক নতুন অতিথি।

অনাগত এই অতিথির আগমনী বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছিলেন নাফিস ইমতিয়াজ। ‘সাধ’ অনুষ্ঠানের একটি ছবি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিয়ে নাফিস অনেক আনন্দ নিয়ে লিখেছিলেন, 'ইটস অ্যা বয়'। অনেকে অনেক শুভকামনা জানিয়েছিলেন সেখানে।

মালিহা-নাফিসের হাস্যোজ্জ্বল ওই ফটোগ্রাফগুলো এখন শুধুই স্মৃতির অ্যালবাম, ধূসর ছবির বেদনার্ত এক আয়োজন। ২ আগস্ট থেকে তা পরিণত  হয়েছে শোকগাথা এক নিথর বইয়ে।

কেননা, ১ আগস্ট দিবাগত রাতে মালিহা চলে গেছেন না ফেরার দেশে। চলে গেছে তার স্বপ্নও। মাতৃত্বের স্ফুরণে উদ্ভাসিত হয়ে যে আলোর সিঁড়ি তিনি সাজিয়েছিলেন, সেই আলো আর নেই। অবিকল অন্ধকার। 

মাত্র দু'মাস পরই অফুরন্ত আনন্দ আর শান্তির বার্তা নিয়ে যে অতিথির আসার কথা ছিল সে আর কোনও দিনই আসবে না। কারণ, পৃথিবীতে যে তার নিরাপদ আবাসস্থল সেই মালিহা নেই, তাই সেও আর আসবে না কোনওদিন। অব্যক্ত বেদনা আর কষ্টমুখর এই ভার কি বহন করা যায় সহজে!

মালিহার মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে। আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা এই নারী ১ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে হার মানেন ডেঙ্গুর কাছে।

গত ২১ জুলাই জ্বর শুরু হয় তার, ২২ জুলাই ভর্তি হন উত্তরার লুভানা হাসপাতালে। আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য আসেন রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে। সেখানে দু'দিন থাকার পর অবনতি হয় তার অবস্থার। সব শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। সপ্তাহখানেক চিকিৎসাধীন থাকার পর চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে তার যুগল যাত্রা- তিনি আর তার অনাগত একজনের।

মাত্র ২৭ বছর বয়সের মালিহা বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউএফটি) থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছিলেন, কর্মরত ছিলেন মেঘনা নিট কম্পোজিট লিমিটেডে। বিয়ে হয়েছিল আঠারোর ২০ জুনে।

স্বামী নাফিস ইমতিয়াজ পেশায় প্রকৌশলী। কর্মরত আছেন 'সিঙ্গুলারিটি' নামে একটি প্রতিষ্ঠানে। 

মালিহার মামা ডা. কামাল আব্দুল ওয়াহাব বলেন, 'ওর বয়স যখন তিন বছর, তখন বাবা মারা যান ওর। বড় বোন ফারিহা আর ওকে বড় করেন। তার মা আসমাউল হুসনা সাথী। মায়ের স্বপ্ন পূরণ করে মালিহা সত্যিই অনেক বড় হয়েছিলেন। আরও বড় হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন এক আকাশ স্বপ্ন নিয়ে। সেই স্বপ্ন এভাবে থেমে যাবে, কে জানত!

মালিহার দাফন হয়েছে শুক্রবার, গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ধনবাড়িতে।

মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত স্বামীর পরিবারের সঙ্গে উত্তরায় থাকতেন মালিহা। নাফিসের মায়ের ফেসবুক স্ট্যাটাসে নববধূ সাজে মালিহা এবং নাফিসসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে এক পারিবারিক ছবি, তাতে লেখা- ‘আমার পরিবার’। এই পরিবারে আর মাত্র দুই মাস পরই যোগ হতো নতুন আর এক সদস্য। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল বোধহীন এক মশার কামড়ে!

বিডি প্রতিদিন/কালাম



এই পাতার আরো খবর