ঢাকা, রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ার অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

বন্দর নগর চট্টগ্রামে চলতি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন পাঁচ জন। প্রতিদিন নতুন করে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। অন্যদিকে বাসার ছাদে বা আঙিনায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে মশার লার্ভা থাকলেই জরিমানা গুণতে হচ্ছে ভবন মালিকদের। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ডেঙ্গু মোকাবেলায় কোনো সফলতা দেখাতে পারছে না চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। তাদের দাবি, ব্যর্থতা ঢাকতে লোক দেখানো ক্রাশ পোগ্রাম এবং ড্রোন উড়িয়ে ছাদে মশা খুঁজছে সংস্থাটি।

নগর পরিকল্পনাবিদ সুভাষ বড়ুয়া বলেন, সিটি করপোরেশনের কাজ হচ্ছে সারা বছর শহরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা। মশক নিধনে ওষুধ ছিটানো ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু সারাবছর খবর থাকে না, মানুষের জীবন যাওয়ার পর তারা কাজগুলো করে। এখন তো জরিমানা করে ডেঙ্গুর প্রকোপ বন্ধ করা যাবে না, যদিও বা তাদের সচেতন করতে না পারে। এখন যখন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে তারা গান রচনা করছে, ড্রোন ওড়াচ্ছে, জরিমানা করা হচ্ছে। এ সব কিছু করা হচ্ছে মূলত নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করে জনগণের ঘাড়ে দায় চাপানোর জন্য। তারা সারা বছর কি করে সেটা এখন বড় প্রশ্ন। মূলত সঠিক পরিকল্পনা ও  জবাবদিহিতাহীনতা কারণে যে যার মতো কাজ করছে। পরিকল্পনা করে যদি নগরকে নিয়ে কাজ করা যায় তাহলে সব সম্ভব। ডেঙ্গু একদিনে আসেনি, যখন এর প্রাদুর্ভাব কম ছিল তখন থেকে সচেতনতা করলে তাহলে এখন আর এত কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতো না।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা পাঁচটি স্পটে গান চালিয়ে প্রচার অভিযান চালাচ্ছি। পাশাপাশি রেড ক্রিসেন্টের নেতৃত্বে ১০টি স্পটে প্রতিদিন ডেঙ্গু সচেতনতায় প্রচার ও লিফলেট বিলি করা হচ্ছে। মশা নিধনে বাজেটে ৫ কোটি টাকা খরচ ধরা হলেও এর চেয়ে বেশি খরচ করা হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

জানা গেছে, নগরীর বাসা-বাড়ি ও অফিস-আদালতের ছাদ বাগান এবং অন্যান্য উৎসে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভা খুঁজতে ড্রোন ব্যবহার করছে চসিক। ‘ডিজেআই ম্যাভিক এয়ার এস২’ মডেলের এ ড্রোনের ওজন ৫৯৫ গ্রাম। ড্রোনে আছে ৪৮ মেগাপিক্সেলের একটি ক্যামেরা। মাটি থেকে ১০০ মিটার উঁচুতে উঠে ড্রোনের সাহায্যে ছবি বা ভিডিও করা যাচ্ছে। ড্রোনটির জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে প্রতি দিন পাঁচ হাজার টাকা করে ভাড়া গুনতে হচ্ছে। ড্রোন পরিচালনার জন্য সাগর দত্ত নামে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছে চসিক। নগরের ৬০টি আবাসিক এলাকায় এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ও লার্ভা শনাক্তে ড্রোন ব্যবহার করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। পাশাপাশি ৪৩ হাজার টাকা খরচ করে রেকর্ডিং করা হয়েছে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় সচেতনতামূলক গান। তবে চসিকের এসব কর্মকাণ্ড কতটুকু ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে পারবে ও জনগণকে সচেতন করতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে নগরবাসীর মনে।

চসিক সূত্র জানায়, গত ৫ জুলাই থেতে ১০ জুলাই পর্যন্ত নগরীর নির্মাণাধীন বাড়ির নীচতলা ও ছাদ, ছাদবাগান কিংবা বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানের পরিত্যক্ত স্থানে পানি জমে থাকায় ৪টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১৯ জনকে প্রায় ২ লক্ষ  টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মশা নিধনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বরাদ্দ রেখেছে ৫ কোটি টাকা, যা বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের পাঁচ গুণ। গেলবার মশা নিধনে ১ কোটি টাকা ব্যয় করেছে চসিক। এর মধ্যে শুধু মশার ওষুধ কেনায় ব্যয় দেখানো হয়েছে ৮০ লাখ টাকা।

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল



এই পাতার আরো খবর