ঢাকা, রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পাহাড়ে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ, চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু
জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

রাঙামাটিতে দ্রুত বাড়ছে ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। একই সাথে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গুও। এরই মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৪৫ জন। আর ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত সংখ্যা ছাড়িয়েছে এক হাজার ৮৫২ জনের। তাই উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বেড়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগও।

রাঙামাটির জেলা সদরে ম্যালেরিয়া রোগী তেমন আক্রান্ত না থাকলেও উপজেলায় এ প্রকোপ ভয়াবহ। তাই প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ম্যালেরিয়া রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় একাধিক মেডিকেল টিম গঠন করেছে বেসরকারি এনজিও ব্র্যাক। তবুও টনক নড়েনি পৌর কর্তৃপক্ষের। মশা নিধনে নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ।

রাঙামাটি জেলা এনজিও সংস্থা ব্র্যাক সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে ৭ মাসে রাঙামাটি জেলায় ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় এক হাজার ৮৫২ জন, যা এখনো বাড়ছে। রাঙামাটি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বাঘাইছড়ি, বরকল, বিলাইছড়ি ও জুড়াছড়ি। এসব উপজেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। তাই জেলা স্থাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে চারটি উপজেলাকে ম্যালেরিয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করে গঠন করা হয়েছে মেডিকেল টিম। একই সঙ্গে ম্যালেরিয়া রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে স্বাস্থ্য পার্টনার হিসেবে কাজ করছে ব্র্যাক।

রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. সৈকত আকবর জানান, প্রতি বছরে চার মাস অর্থাৎ মে, জুন, জুলাই ও আগস্ট পার্বত্যাঞ্চলে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। কারণ বর্ষার কারণে ম্যালেরিয়া মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। এছাড়া রাঙামাটি পাহাড়ি অঞ্চল জঙ্গল ও ঝোপঝাড়ের কারণে এ মশা সহজে মানুষকে আক্রান্ত করে। তবে এবার যোগ হয়েছে ডেঙ্গু রোগও। রাঙামাটিতে এখন পর্যন্ত ৪৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। বর্তমানে ১৪ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আর ম্যালেরিয়া রোগী পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেশি, তারা শহরে আসে না । কারণ তারা সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে। তাই গত তিন বছরে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে কোনো রোগী মারা যায়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চালু হওয়ার পর ২০১৩ সাল পর্যন্ত ম্যালেরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের পর ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ হারায় পাহাড়ে। ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় উল্লেখযোগ্য হারে। তবে কেন পার্বত্যাঞ্চলে ম্যালেরিয়ার রোগ বেড়ে চলেছে, তার কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেনি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

রাঙামাটি ব্র্যাকের জেলা সমন্বয়কারী মো. হাবিবুর রহমান জানান, রাঙামাটির ১০টি উপজেলায় ৩৫টি কার্যালয় আছে ম্যালেরিয়া বিষয়ক কাজ করার জন্য। এসব কার্যালয়ে এক হাজার ৬১০ স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছে। তারা ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে এসব স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শুধু জেলা বা উপজেলায় নয়, ইউনিয়নেও স্বাস্থ্য কর্মীরা ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। যার কারণে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু সংখ্যা একেবারে নেই।

অন্যদিকে রাঙামাটি জেলা শহরের ডেঙ্গু রোগ দেখা দিলেও মশা নিধনের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি রাঙামাটি পৌরসভা। গ্রহণ করেনি কোনো ক্রাস প্রোগ্রামও। তবে চিকিৎসকদের মতে, শহরের বিভিন্ন স্থানে মিলছে এডিস মশার লার্ভা।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর