ঢাকা, বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সেমিনারে বক্তারা
পদ্মা সেতু হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে আড়াই শতাংশ
নিজস্ব প্রতিবেদক

উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা পদ্মা সেতু শুধু দক্ষিণাঞ্চলের চেহারা বদলে দেবে না, বরং এই সেতু অর্থনীতির ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে পদ্মা সেতুর সড়ক এবং রেল উভয় অংশ চালু হলে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে আড়াই শতাংশ। গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘জাতীয় অর্থনীতিতে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব’ শীর্ষক এক সংলাপ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, অনেক বাধা-বিপত্তির পরও নিজস্ব অর্থায়নে  পদ্মা সেতু নির্মাণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সাহসের পরিচয় দিয়েছেন, তা আগামী দিনে অনুপ্রেরণা জোগাবে। অনেকেই ভালো দেখতে পারেন না, কিছু খারাপ বলতেই হবে। পদ্মা সেতু নিয়েও তেমন হয়েছে। কিন্তু এই সেতুর কারণেই কীর্তিনাশা পদ্মা এখন কীর্তিমান পদ্মায় পরিণত হয়েছে। পদ্মা সেতু দেশের অর্থনীতিতে বিশাল প্রভাব ফেলবে, জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করবে। অর্থনীতিসহ সার্বিক ক্ষেত্রে উন্নতি হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, অনেকেই পদ্মা সেতুর নামকরণ শেখ হাসিনার নামে করার জন্য বলেছিলেন। এটাও প্রধানমন্ত্রীর বিশালতা। তিনি তার নাম যুক্ত করতে চাননি। আমরা বলব ‘পাথরে না লিখে হৃদয়ে লেখা হোক শেখ হাসিনার নাম’। পদ্মা সেতু যতদিন থাকবে, আমরা এই নাম হৃদয়ে নিয়েই চলব। পদ্মা সেতু শুধু শেখ হাসিনারই নয়, ১৭ কোটি মানুষেরও কৃতিত্ব।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, অনেক ষড়যন্ত্রের মধ্যে পদ্মা সেতু নিয়ে শেখ হাসিনা সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আমি তখন তার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে ছিলাম। ষড়যন্ত্র যেটা হয়েছে, সেটা খুবই গভীর মহলের ষড়যন্ত্র ছিল। এটা এমন ছিল না যে কেউ কাউকে শিক্ষা  দেওয়ার জন্য এমন করেছে। ষড়যন্ত্র ছিল বাংলাদেশে যেন এত বড় অবকাঠামো না হয়। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগকে ভিত্তিহীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কাজ তখনো শুরু হয়নি, কনস্ট্রাকশন শুরু হয়নি; তারা (বিশ্বব্যাংক) বলেছে কনসালটেন্সিতে দুর্নীতি হয়েছে। যেটা (কনসালটেন্ট) তখন নিয়োগই করা হয়নি।  সেটা করার আগেই দুর্নীতি করার নাকি ইচ্ছা ছিল! দুর্নীতি হয়েছে এমনটাও অভিযোগ ছিল না তাদের। দুর্নীতি করার ইচ্ছা ছিল, এই ভিত্তিতে তারা পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বাতিল করে। তাতে বোঝা যাচ্ছে, এই সেতু যেন বাংলাদেশ না করতে পারে সেটাই ছিল উদ্দেশ্য। সালমান এফ রহমান বলেন, ‘কানাডার আদালত পর্যন্ত গড়াল বিষয়টা। সেখান থেকে রায় এলো, কোনো দুর্নীতি হয়নি। সে সময় প্রধানমন্ত্রী সাহস করে বললেন, তাদের টাকার দরকার নেই, আমরা নিজের টাকায় করব। তখন সরকারেরও অনেকেই বলেছিলেন, এ রকম না করার জন্য, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঝামেলা না করার জন্য এবং তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রাখা উচিত। আমাদের মধ্যেই কয়জন ছিল যে, নিজের টাকায় সেতু করতে বাধা দিয়েছিলাম। নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করা নিয়ে সুশীলসমাজও অনেক সমালোচনা করেছে।’ তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নামে পদ্মা সেতুর নামকরণ করার প্রস্তাব করা হলেও তিনি পদ্মা নামেই সেতু করার পক্ষে মত দেন। সেতুতে নাম থাকুক আর নাই থাকুক, এর নাম শেখ হাসিনা সেতু। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের জিডিপি ৪৫০ বিলিয়ন ডলার হলে রেল এবং সেতু একত্রে চালু হলে আমাদের অর্থনীতিতে বছরে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে ১০ বিলিয়ন ডলার যোগ করবে। পদ্মা সেতু নির্মাণে আমাদের যে খরচ ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার তার সাড়ে ৩ গুণ বেশি আমাদের অর্থনীতিতে যোগ করবে।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত, সামাজিকভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং পরিবেশবান্ধব দেশ হিসেবে দেখতে চাই। আর এসব অর্জনে পদ্মা সেতু হবে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল অনুঘটক। ড. মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, পদ্মা সেতুর ফলে বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যে অর্থনৈতিক বিভাজন ছিল পদ্মা সেতুর মাধ্যমে তা নিরসন হবে। পদ্মা সেতু আমাদের জিডিপিতে ১ দশমিক ২ শতাংশ যোগ করবে। আর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে ২ শতাংশেরও বেশি অবদান রাখবে। সিপিডির ফেলো বলেন, ‘দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের যে ১৩ জেলা দারিদ্র্যসীমার নিচে আছে তাদের আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে নিয়ে এসে ২০৪১ সালের মধ্যে অভীষ্ট উন্নত দেশের দিকে যাত্রা করতে পারব। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ও উন্নয়নের পিছিয়ে পড়া জেলাগুলোকে একীভূত করতে পারব।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং উপকমিটির সদস্য সচিব সিদ্দিকুর রহমান। এতে আরও বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, এফবিসিসিআইর সভাপতি জসিম উদ্দিন, সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সিনিয়র সহসভাপতি ও সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, গ্লোবাল টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল হক বাবু, বিএসএমএ’র চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন, মাছরাঙা টেলিভিশনের হেড অব নিউজ রেজওয়ানুল হক রাজা, অর্থনীতিবিদ ড. জামালউদ্দিন আহমেদ, সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান, বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শামসুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তানিয়া হক, সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের আলমগীর কবির, মনোয়ার হোসেন, মৌসুমী ইসলাম প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।



এই পাতার আরো খবর