বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও আশার আলো দেখাচ্ছে দেশের রপ্তানি আয়ে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি। এতে ডলারের সংকটও কেটে যাবে বলে আশা রপ্তানিকারকদের। এ ছাড়া তিন কারণে এই রেকর্ড আয় হয়েছে বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা। নতুন বাজারে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যের পোশাকের চাহিদা এবং বিশ্ববাজারে ইতিবাচক ভাবমূর্তি এই আয়ের মূল কারণ।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে বড় দুই উৎস রপ্তানি বাণিজ্য ও রেমিট্যান্স। বিদায়ি বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে রেমিট্যান্সে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এবার সুখবর এলো রপ্তানি থেকেও।
সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, ২০২২ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে রেকর্ড ৫৩৬ কোটি ৫১ লাখ ৯০ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা এক মাসের সর্বোচ্চ রপ্তানি আয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বরেও ৪৯০ কোটি ৭৬ লাখ ৮০ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। এ বছর নভেম্বরে প্রথমবারের মতো এক মাসের রপ্তানি আয় ৫০০ কোটির ঘর ছাড়ায়। এই হিসাবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে রপ্তানি আয় আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ৯.৩৩ শতাংশ বেড়েছে। ডিসেম্বরে ৫৪২ কোটি ১০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল সরকার। তাতে রপ্তানির অর্জন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১.০৩ শতাংশ পিছিয়ে থাকল।
ইপিবির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মোট দুই হাজার ৭৩১ কোটি ১২ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৫৮ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে মুখ্য ভূমিকা রেখে চলা তৈরি পোশাক খাতও ডিসেম্বরে ভালো করেছে। গত ছয় মাস মিলিয়ে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫.৫৬ শতাংশ।
ছয় মাসে এই খাতে মোট রপ্তানি হয়েছে দুই হাজার ২৯৯ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের পণ্য। এর মধ্যে নিট পোশাক এক হাজার ২৬৫ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩.৪২ শতাংশ। ওভেন পোশাক এক হাজার ৩৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮.২৯ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির ফলে ইউনিট প্রাইস বেড়েছে। এ ছাড়া নতুন বাজারে রপ্তানি বেড়েছে, উচ্চমূল্যের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। একই সঙ্গে ব্র্যান্ডিংয়ের ফলে আস্থা বেড়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। তবে কাঁচামালের দর এবং পরিবহন খরচ কমতে শুরু করেছে। এর ফলে পোশাকের দামও কমবে। ফলে ফেব্রুয়ারি থেকে আবার দাম কমার আশঙ্কা করছেন তিনি।
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘মন্দার মধ্যে রেকর্ড রপ্তানি আয় আশার আলো দেখাচ্ছে। এতে ডলার সংকটও কেটে যাবে বলে আশা আমাদের। যদিও আমাদের অবস্থা ভালো নয়, তবু এটা আমাদের জন্য শুভ লক্ষণ। সারা বিশ্ব যখন টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে আছে, সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি আশা দেখাচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় অঙ্কের রপ্তানি অতীতে কখনো হয়নি। ’
প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক ছাড়াও চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৬৩ কোটি ৭২ লাখ ডলারের, তাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ শতাংশ। আগের অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৫৬ কোটি ৩৬ লাখ ডলার।
রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধির বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘রেমিট্যান্সের পর রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি নিঃসন্দেহে অর্থনীতির জন্য স্বস্তির খবর। রপ্তানি বাড়লে রিজার্ভ বাড়বে, ডলারের বাজারে চলমান সংকট প্রশমিত হবে। ’
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন