ভূ-রাজনৈতিক সংকট এবং মন্দার আশঙ্কা সত্ত্বেও গত বছর আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দামে খুব বেশি একটা পরিবর্তন হয়নি। মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ২০২২ সালের শেষের নয় মাসে প্রভাব ফেলেছে সোনার দামের ওপরও। খবর দ্য ইকোনোমিক টাইমসের।
ইউএস ফেডারেল রিজার্ভ মার্কিন ডলারের মূল্য আগ্রাসী হারে বৃদ্ধি করেছে। এমন পদক্ষেপ ডলারকে আকর্ষণীয় লক্ষ্যে পরিণত করেছে যা স্বর্ণের মতো সুদমুক্ত সম্পদের আবেদন ক্ষুন্ন করেছে।
গত বছর লন্ডনের প্রধান মার্কেটগুলোতে প্রতি আউন্স স্পট গোল্ড ১৮২৯.৮৮ ডলারে বিক্রি হয়। ইউক্রেনে রাশিয়া সামরিক হামলা শুরু করলে মার্চে দাম বেড়ে রেকর্ড ২০৬৯ ডলার হয়। তবে এটা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।
বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলায় মূল্য বৃদ্ধি করে। এতে গতবছর ০.২৯ শতাংশ মূল্যহ্রাসে স্বর্ণের দাম স্থির হয়।
ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারের বিপরীতে ভারতে ২০২২ সালে স্বর্ণের মূল্য রেকর্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে এটা ১৪ শতাংশ রিটার্ন নিষ্পত্তি করতে পেরেছে। দুর্বল রুপি এবং স্থানীয় চাহিদা বৃদ্ধি ভারতে স্বর্ণের দামের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ ফেলতে অবদান রাখে।
ভারতে অভ্যন্তরীণ ফিউচার মার্কেটে (নিলাম বাজার) ২০২২ সালে প্রতি দশ গ্রাম স্বর্ণ ৪৮ হাজার ৫০ রুপিতে শুরু হয় এবং পরবর্তী তিনমাস ৫৫ হাজার ৫৫৮ রুপিতে দাঁড়ায়। সেপ্টেম্বরে এটা ৪৯ হাজার রুপিতে নামে এবং বছর শেষ হয় প্রতি দশ গ্রাম ৫৫ হাজার রুপিতে।
তবে ভারতীয় স্বর্ণের দাম সাধারণত বিদেশি বেঞ্চমার্ক, অভ্যন্তরীণ চাহিদা, ভারতীয় রুপির মূল্যের ওঠানামা এবং সরকারি নীতির ওপর নির্ভর করে।
গত বছর ডলারের বিপরীতে ভারতের মুদ্রার রেকর্ড দরপতন হয় (এক ডলার সমান ৮৩.২৬ রুপি)। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অপরিশোধিত তেলের ঊর্ধ্বমূল্য (ক্রুড ওয়েল) এবং সেন্ট্রাল ব্যাংকের নীতিব্যবস্থা রুপিকে চাপে ফেলে। কিন্তু আমদানির মাধ্যমে ভারত স্বর্ণের চাহিদা পূরণ করলে দুর্বল মুদ্রায় স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পায়।
বিয়ে এবং উৎসব সম্পর্কিত চাহিদার কারণে ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে স্বর্ণের মূল্য বেড়ে যায়। করোনার কারণে দুই বছর উৎসব স্থগিত থাকার পর ভারতে স্বর্ণের চাহিদা উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পায়।
বিগত কয়েক বছর আমদানিকারকদের অকল্পনীয় প্রতিদান দিয়েছে স্বর্ণ। গত পাঁচ বছর স্বর্ণের মূল্য বেড়েছে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত। ২০০৩ সালে প্রতি ১০ গ্রাম স্বর্ণ ছিল ৬ হাজার রুপি যা আমদানিকারকদের ৮০০ শতাংশ পর্যন্ত লাভ দিয়েছে।
চীনে মহামারি সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করায় স্বর্ণের বাহ্যিক চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে । একইসঙ্গে ভারতে অলঙ্কারের স্থির চাহিদার কারণে বিদ্যমান ট্রেন্ড অব্যাহত থাকতে পারে।
তবে শক্তিশালী মার্কিন ডলার, বন্ডের উচ্চ সুদ এবং স্থির শেয়ার মার্কেট বড় লাভে বাধ সাধতে পারে। একই সময়ে চলতি বছর অভ্যন্তরীণ বাজারে স্বর্ণের মূল্য বেড়ে যেতে পারে। ভারতের মুদ্রার মান কমে যাওয়া, বিদ্যমান উচ্চ কর কাঠামো এবং অলঙ্কারের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে দেশের ক্রেতাদেরকে আন্তর্জাতিক বাজারের বিপরীতে অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধ করতে হতে পারে।
এ কারণে স্বর্ণের দাম উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পেতে পারে, একাধিক মূল্য সংশোধনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিনিয়োগকারীরা এই সংশোধনকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে সঞ্চয় হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন।
বিডি প্রতিদিন/কবিরুল