বিগত দুই দশকে বাংলাদেশ ধারাবাহিক উন্নতি করেছে। বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে আছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার মধ্যেও দেশটি অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থানে আছে। তবে, বাংলাদেশকে এখন দীর্ঘমেয়াদী চ্যালেঞ্জগুলোর দিকে নজর দিতে হবে।
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের আয়োজনে এক সেমিনারে বাংলাদেশে সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর(ডিএমডি) অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান, অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক মাসুদা ইয়াসমিন ও আইএমএফ প্রধান রাহুল আনন্দ প্রমুখ।
সেমিনারে আইএমএফের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর বলেন, দ্রারিদ্র্যতা হ্রাস, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, বিশেষ করে নারীদের কর্মসংস্থান এবং মাতৃমৃত্যু হার কমানোসহ নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উন্নতি করছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় স্বাস্থ্য ও জেন্ডার গ্যাপ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রেও দেশটি উন্নয়ন লক্ষণীয়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার ক্ষেত্রেও জেন্ডার বৈষম্য কমে এসেছে। পানি ও স্যানিটেশনের মতো মৌলিক অধিকারে মানুষের প্রবেশগম্যতা বেড়েছে। যা দেশটিকে অর্থনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে।
তবে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জগুলোর দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। ইতোমধ্যেই দেশে ‘জলবায়ু অভিবাসী’ তৈরি হয়েছে। সুতরাং এদিকে নজর দিতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশে বেসরকারি বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি। এর জন্য অর্থনীতির অবকাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংস্কার ও পুঁজিবাজার শক্তিশালী করতে হবে, যাতে সঞ্চয় বিনিয়োগে ব্যবহৃত হতে পারে। এমন নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন যাতে দীর্ঘসূত্রতাকে পাশ কাটিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা যায়। বাংলাদেশ রাজস্ব সংগ্রহের দিক থেকে বিশ্বে নিম্নসারিতে অবস্থান করছে। তাই দেশটিকে পর্যাপ্ত রাজস্ব সংগ্রহের দিকে নজর দিতে হবে। এ সময় আইএমএফের কর্মসূচির ইতিবাচক দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, এটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় আইএমএফের ‘রেসিলিয়েন্ট এবং সাসটেইন্যেবল ট্রাস্টে’র আওতাভূক্ত হবে। ফলে দেশ দীর্ঘমেয়াদে উপকারভোগী হবে।
তার বক্তব্যের পরে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ ও রাহুল আনন্দ। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক মাসুদা ইয়াসমিন।
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ। সাক্ষাৎকালে উপাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এবং এর শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে অবহিত করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা এবং এর শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের প্রতি গভীর আগ্রহ প্রকাশের জন্য তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল